তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই উঁকিঝুঁকি , সমালোচনার অন্ত নেই । কিন্তু কেরিয়ারের পিচে বরাবরই সেইসব অবান্তর বিষয়কে স্ট্রেট ব্যাটেই খেলতে ভালোবাসেন টলিউড সুন্দরী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় । অতিমারীর অবহেও কাজের বিরাম নেই তাঁর । সম্প্রতি হইচই ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে অভিনেত্রীর সাম্প্রতিকতম নিবেদন ' তাসের ঘর '। সুজাতার তাসের ঘরে উকিঁ দিল হিন্দুস্তান টাইম বাংলা।
করোনা আবহে প্রমোশন থেকে শুটিংয়ে সদাই ব্যস্ত স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। বলিউডে পাতাল লোক , দিল বেচারার পরে এবার বাংলায় তাসের ঘর , টলিউডের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রী স্বস্তিকা তাই তো ?
-- না, আসলে পাতাল লোক আর দিল বেচারার শুটিং তো আগেই হয়ে গিয়েছিল । মূলত প্রমোশন্যাল কাজেই ব্যস্ত ছিলাম । তবে তাসের ঘরের শুটিং হয়েছে এই করোনার আবহেই । ইনফ্যাক্ট করোনা আবহে কলকাতায় ফিরে শুটিং শুরু হওয়ার পরে এটাই আমার প্রথম কাজ। সবমিলিয়ে ভালো লাগছে, কাজের মধ্যে থাকতে পেরে।
বাঙালি দর্শকদের একটা আক্ষেপ ছিল অনেকদিন থেকে যে স্বস্তিকাকে হিন্দি বা বলিউড প্রজেক্টে বার বার দেখা গেলেও অনেকদিন বাংলার কোনো রিলিজে দেখা যাচ্ছে না , সেটা নিয়ে কি বলবেন ?
-- দেখুন মানুষের সবসময়ই কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে আক্ষেপ থাকবেই । যখন আমি একসময় একের পর এক বাংলা ছবিতে কাজ করেছি , তখন আমায় প্রশ্ন করা হতো আমি কেন বলিউডে যাচ্ছি না , আমি হলাম কিনা ন্যাশনাল ট্রেজার- আরও কত্ত কি । এখন যখন হিন্দিতে কাজ করছি তখন আমি কেন বাংলায় নেই সেই প্রশ্ন আসছে । এখন একটা মানুষের একসাথে দু জায়গায় থাকা কি সম্ভব ? একদিকে কাজ বেশি হলে অন্য দিকে তো কাজ কম হওয়াটাই স্বাভাবিক ।
তাসের ঘর রিলিজের আগে একটা প্রোমো টিজারে বেশ কিছু অহেতুক বিতর্কও তৈরি হয়েছিল, ব্রা-এর স্ট্রাপ দেখা যাওয়া নিয়ে, এই নিয়ে আপনার মতামত?
---দেখুন আমার এ বিষয়ে কিছুই বলার নেই । আমি যদি চুপ করে থাকি তাহলে কোনও বিতর্কই হবে না । কিন্তু আমি চুপ থাকব কেন ? মানুষের সাধারণত অত সময় নেই সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে ঘেঁটে হাজার হাজার কমেন্টের মধ্যে থেকে বেছে বেছে কে কি বলল তার উত্তর দেওয়া । কিন্তু আমি সেটা করি কারণ আমার মনে হয় এগুলো বিতর্ক নয়, খানিকটা গঠনমূলক আলোচনা । আমি তো সবসময় চাই এমন বিতর্কে অংশ নিতে । একটা গায়ের ট্যাটু বা ব্রায়ের স্ট্রাপ দেখতে পেলেই সমস্যা শুরু হয়ে গেলো ? আর তা ছাড়া এটা কোথায় লেখা আছে মহিলাদের অন্তর্বাস সবসময় ঢেকে একেবারে ফিটফাট হয়ে যথাযথ ভাবে লুক্কায়িত অবস্থায় রাখতে হবে ? মানুষ কি জানেন না মহিলাদের স্তন আছে , তাঁরা অন্তর্বাস পড়েন , কোনো কারণে সেটার স্ট্রাপ বেরিয়ে যেতেই পারে ? এতো অত্যন্ত সাধারণ বিষয় ।
পুরুষেরা যখন রাস্তাঘাটে কোমরের নিচে লো-ওয়েস্ট প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ান, দেখলেই মনে হয় যখন-তখন খুলে যাবে , তখন কোনো অসুবিধে হয় না । সেটা কি দৃষ্টিকটু নয় ? তখন কি তাঁরা ভাবেন মহিলাদের কেমন লাগবে ? আসলে তাঁরা কেয়ার করেন না । তো আমি করবো কেন ?
সোশ্যাল মিডিয়াতে আজকাল ট্রোলিংয়ের একটা ট্রেন্ড চলছে , কদিন আগেই আপনার হেয়ার স্টাইল নিয়েও জলঘোলা হয়েছে। কোন দিকে এগোচ্ছে এই সমাজ. ভেবেছেন?
---দেখুন , সমাজ কোনো দিকেই যাবে না । বিশ্বব্যাপী এত পরিবর্তনের মাঝে আমরা আশা করেছিলাম মানুষের ধ্যান ধারণার পরিবর্তন হয়েছে । হ্যাঁ,অবশ্যই হয়েছে তবে তা শুধুই নিম্ন গামী বা নরকের পথে পরিবর্তন । আজ শুধু আমি কেন , যে কোনও মেয়ে যদি পুরুষের মতো মদের দোকানে যায় , শর্টস পরে , সিগারেট খায় সাথে সাথে প্রশ্ন উঠবে । কিন্তু চুপ করে থাকার তো কোনো মানে নেই , প্রতিবাদ করতে হবে । না করলে সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকারও মানে নেই ।
আজ আমি যদি এক মাথা সিঁদুর শাঁখা পলা শাড়ি পরে যদি থাকি তখন আমায় একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে শুনতে হবে ব্যাক ডেটেড , আবার না পড়লে শুনতে হবে আমি সংস্কার মানিনা । তখন কেন শাঁখা সিঁদুর পড়া উচিৎ , ভারতীয় নারীর ইতিহাস ভূগোল একেবারে পিন্ডি চটকে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে । কাজেই সমস্যা দুদিকেই । এখন আমি চিৎকার করছি , আজ থেকে একশো বছর পরে অন্য কেউ করবেন , ব্যাপারটা চলতেই থাকবে বলে আমার মনে হয় ।
তাসের ঘরের সুজাতা তো দেখা যাচ্ছে সবসময় চুপচাপ , শান্ত কম কথা বলে । রিয়েল লাইফের স্বস্তিকা ব্যাপারটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন ?
--- দেখুন সুজাতা যতটা চুপ চাপ থাকে আমি ঠিক ততটাই বকবক করতে ভালোবাসি । তাছাড়া সুজাতার মতো রান্না করার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই । যদিও লকডাউনের চাপে কদিন করতে হয়েছে কিন্তু ওই পর্যন্তই । আসলে একা থাকা এবং একাকিত্বের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে । বিয়িং অ্যালোন আর ফিলিং লোনলির পার্থক্য আমরা অনেক সময়েই গুলিয়ে ফেলি । সুজাতা অনেকটাই প্রথম দলের মধ্যে পড়েন , যাঁরা একা থাকাটাকে উপভোগ করেন ।
ভিড়ের মধ্যেও একা হয়ে যেতে চান । সেখানে একা থাকা আমার কাছে আতঙ্ক । অথচ দেখুন , জীবনটাই এমন হয়ে গেল , আজ আমার ফ্ল্যাটেও আমি একাই থাকি ।
আর দেখুন আমাদের অনেক তফাৎ থাকলেও আমার মনে হয় , আমরা তো নারী , কোথাও গিয়ে আমাদের লড়াইটাও এক হয়ে যায় । নানা সূত্রে একাধিক মহিলার সাথে আমার আলাপ হয় , কথা হয় । সেখানেও আমি দেখেছি হয়তো সবাই আলাদা , আমি আর সুজাতাতো ভিন্ন মেরুর দুটি প্রাণী , তবুও কোথাও গিয়ে লড়াইটা যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছে ।
এছাড়া , সুজাতা আর আমার মিল বলতে আমরা দুজনেই গন্ধ নিয়ে খুব সেনসেটিভ । তবে সুজাতার গন্ধের ব্যাপারে যে ভালো লাগা আছে , আমার সেখানে একটা বাতিক আছে বলতে পারেন । সবসময় খারাপ গন্ধই এসে যেন আমার নাকে হিট করে ।
কিয়া কসমস , পাঁচফোড়নের পরে সুদীপ্ত রায়ের সাথে আপনার এটি তৃতীয় কাজ । পরিচালককে নিয়ে কি বলবেন ?
---সুদীপ্ত আমার খুব পছন্দের একজন পরিচালক । আমাদের বন্ধুত্বটাও দুর্দান্ত । ওর চিন্তা ভাবনা , মনন , চরিত্রের বুনন , এস্থেটিক সেন্স , শট নেওয়ার পদ্ধতি সব কিছুই খুব ভালো লাগে আমার । ও যখনই যা কাজ করে , সিনেমা হোক , শর্ট ফিল্ম হোক যাই হোক ,আমি সবসময়ই সেগুলো দেখার জন্য উৎসাহের সাথে অপেক্ষা করি । তাছাড়া আমাদের এক্টর -ডিরেক্টর বন্ডিংটাও দারুন । যথেষ্ট স্পেস দেয় আমায়, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো রিজিডিটি নেই | তাছাড়া শুট ছাড়াও আমাদের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় , ওর থেকে অনেক কিছু নতুন নতুন জিনিস জানতে পারি , সেগুলো কোথাও গিয়ে শুটিংয়ে সাহায্যই করে । আমরা টিম ওয়ার্ক করে কাজ করি , আমার মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় ও । ওর সাথে ভবিষ্যতে আরো কাজ করতে চাই আমি ।
তাছাড়া কদিন আগেই তাসের ঘরের ডাবিং করতে যাওয়ার সময়তেই আমি সুদীপ্তকে বলছিলাম , আমার সারাজীবনের সমস্ত বয়ফ্রেন্ডের সাথেও আমি বোধ হয় এতো কথা বলিনি , যা আমি তোমার সাথে বলি ।
তাসের ঘরের তরফ থেকে দর্শকদের উদ্দেশে কি বলবেন ?
---দেখুন আমার শেষ বাংলা ছবিও রিলিজ করেছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই , লাভলি মিসেস মুখার্জী । তারপরে আরো দুটো রিলিজের কথা থাকলেও , প্যানডেমিকের কারণে আটকে যায় । মানুষ আমার কাজ এর মধ্যে অন্য ভাষায় দেখেছেন | প্রায় দেড় বছর পরে হইচই এর সাথে আবার কাজ করলাম । একটাই কথা বলব সম্পূর্ণ অন্যরকমের ছবি হয়েছে তাসের ঘর । সাম্প্রতিক কালে বাংলা কেন হিন্দিতেও এই ধরণের কোনো ছবি হয়নি । আশা করি সবার ভালো লাগবে আমাদের এক্সপেরিমেন্ট ।না লাগলে আর কি করা যাবে , গালাগালি খেতে হবে ।
আর দেখুন আমি সারাক্ষন শুনতে পাই আমি নাকি খুব আন্ডার ভিউড । আমার যোগ্যতা অনুসারে স্পেস আমি একদমই নাকি পাইনি । তো তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি ছবিটা দেখুন , এখানে শুধুই আমি আছি । আমিই হিরো আমিই হিরোইন, আবার আমিই ভিলেন , কমেডিয়ান ,সবকিছুই আমি । আর সুদীপ্তর কাজ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন ও কত উচ্চমানের পরিচালক ।
তাহলে কি অন স্ক্রিন একাকিত্বের দরুন কাউকে মিস করেছেন ?
-----কোনো প্রশ্নই ওঠেনা কাউকে মিস করার । মিস করতে যাবোই বা কেন কাউকে ? আশা করি দর্শকেরা নির্ভেজাল স্বস্তিকাকে পাবেন এই ছবিতে । আমি আর কাউকে স্পেস দেওয়ার কোনও জায়গাই তৈরী করিনি যে মিস করব।
অকপট স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর ।