মেয়ের সুখের জন্য তিনি আজীবন সন্তানের ভারী বোঁচকা বইতেও রাজি! অন্বেষা তাঁর আদরের 'রাজকন্যা’। দীর্ঘদিন যাবত বিদেশ-বিভুঁইতে রয়েছে মেয়ে, মানিকে মিস করেন স্বস্তিকা। তবে মেয়ের স্বপ্নপূরণে কোনও খামতি রাখেননি অভিনেত্রী।
কলেজে পড়তে পড়তে মা হয়েছিলেন স্বস্তিকা। বিয়ে টেকেনি, ২ বছরের সন্তান কোলে শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন। তারপর থেকে অন্বেষাকে একা বড় করেছেন, সাপোর্ট মেয়েছেন নিজের বাবা-মা'র। আক্ষরিক অর্থে ‘সিঙ্গল মাদার’ স্বস্তিকা। মা-দাদুর পথে হেঁটে অভিনয় জগতে পা বাড়ানোর শখ কোনওদিন ছিল না স্বস্তিকা কন্যার। সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছে অন্বেষা।
সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশন্যাল স্কুল (কলকাতা) থেকে ১২ ক্লাস পাশ করার পর মুম্বইয়ের সোফিয়া কলেজ সাইকোলজি আর সোসিওলজি নিয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে অন্বেষা। ভবিষ্যতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চ করতে চান স্বস্তিকা তনয়া। বর্তমানে নিজের স্বপ্নের শহর লন্ডনে মনের মতো চাকরিও পেয়েছেন অন্বেষা, সেই সুখবর ফেসবুকে ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী।
তিনি লেখেন, ‘মানি সাইকোলজি তে এম. এস. সি করে এখন কার্ডিফ থেকে লন্ডন পাড়ি দিল। নিজের চেষ্টায় সফল হয়েছে। পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট করে বিশ্বের এত বড় একটা ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেয়েছে। মাসের পর মাস চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়ে দিয়ে ফাইনালি ওর মনের মতন একটা চাকরি পেয়েছে ওর প্রাণের শহরে। খালি বাড়ি আসার সময়টা বের করে ফেললেই হবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সন্তানেরা যা হওয়ার স্বপ্ন দেখে তার দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে দেখাতেই সর্ব সুখ। আমার মেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে আমায় ধন্যবাদ দিতে এলেই বলি, সব তুমি করেছো মা আমার, বিদেশ বিভূইয়ে একা থেকেছ, প্রচুর পরীক্ষা দিয়েছ, অনেক খেটেছ, সবটা তোমার প্রাপ্য, মা হয়ে আমি পেছনে বট গাছের মতন ছায়া দিয়েছি খালি, ওটাই আমার কাজ, আর কিছু করিনি। সন্তানদের স্বপ্ন পূরণ হোক, ওদের জীবনে আলো থাক, আতশবাজি থাক, মায়েরা আশ্রয় হয়ে থাক, বট গাছের মতন।’
সন্তানের যেখানে পড়বার ইচ্ছে সেটা যেন মা হয়ে পূরণ করতে পারেন, এই ভাবনা বরাবর কাজ করেছে স্বস্তিকার মনে। তাই দামী গাড়ি বা বাড়ি নয়, মেয়ের জন্য টাকা সঞ্চয় করেছেন স্বস্তিকা। তিনি লেখেন, 'আমি কাজ এর সূত্রে যেখানেই যেতাম, ছানার স্কুল ছুটি থাকলে সেও মায়ের সঙ্গে ড্যাং ড্যাং করতে রাজি। আমার ঠিক মনে পড়ে না, মানি একটু বড় হওয়ার পর আমি ওকে ছাড়া তেমন একটা কোথাও গেছি বলে। মানির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ইংল্যান্ড। এত জায়গায় গেছে বেড়াতে কিন্তু উ.কে গেলেই বলত, মা এখানে আমি একদিন পড়াশোনা করতে আসব। তারপর চাকরি করব, তুমি এখানে এসে আমার কাছে থাকবে। তুমি তো তখন বুড়ি হয়ে যাবে, একা একা তো থাকতে পারবে না।
আমাদের দুজনেরই মিউজিয়াম, ইউনিভার্সিটি, কলেজ এসব ঘুরে দেখার শখ। টুরিস্টরা বেড়াতে গেলে বেশিরভাগ সময়ে সাইট সিইং, খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা এসব কে গুরুত্ব দেয়। আমরা দুজন গন্তব্য স্থলে পৌঁছে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে গপ্প করে ওরা কোথায় ঘুরতে যায় ওদের দেশ এ সেগুলো খুঁজে বের করে সেখানে গেছি। বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় থাকা লোকালদের জিগেস করে এমন সব জায়গা আবিষ্কার করেছি ভাবার বাইরে। একটা গোটাদিন কলেজ পাড়ায় ঘুরে বেরিয়েছি আর নিজেকে বলেছি, দেশ এ ফিরে আরও অনেক মন দিয়ে কাজ করতে হবে, সন্তানের যেখানে পড়বার ইচ্ছে সেটা যেন মা হয়ে পূরণ করতে পারি।'