প্রথমে মা গোপা, আর তারপর বাবা সন্তু চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। তাই মাঝে মাঝেই সমাজ মাধ্যমের পাতায় মনখারাপ করা পোস্ট শেয়ার করে নেন টলিনায়িকা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। কখনও বা তাঁদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন, আবার কখনও তাঁর মধ্যে থাকা মা-বাবার নানা ঝলকের প্রকাশ ভাগ করে নেন অনুরাগীদের সঙ্গে। প্রতিটা লাইনে থাকে সন্তানের মা-বাবাকে নিয়ে আকুতি। কখনও কখনও থাকে তাঁদের মতো করে নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টাও। সোমাবারও অভিনেত্রী তেমনই একটি পোস্ট শেয়ার করে জানিয়েছেন, তিনি নাকি বাবার মতো 'লক্ষ্মী ট্যারা'।
'লক্ষ্মী ট্যারা' বিষয়টা বেশির বাঙালিই মোটামুটি জানেন। এর মধ্যে একটা বিশেষ ব্যাপার রয়েছে। এঁরা ঠিক সাধারণ অর্থে যাঁদের ট্যারা বলা হয় তেমনটা নন। মাঝে মাঝে তাঁদের মধ্যে এই ভাব দেখা যায়। আর দেখতেও বেশ অন্যরকম লাগে। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সৌভাগ্যও। স্বস্তিকার কথায় তাঁর বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়ও নাকি 'লক্ষ্মী ট্যারা' ছিলেন। আর এখন বাবার থেকে তাঁর মধ্যে এসেছে এই বিষয়টা। মাঝে মাঝে তাঁর বোন তাঁকে একথা বললেও, এবার তিনি নিজেই ফ্লাইটে করে ফেরার পথে ছবি তুলতে গিয়ে নিজেকে বাবার মতোই 'লক্ষ্মী ট্যারা' ভাবে আবিষ্কার করেছেন। তাই সেই ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে নায়িকা নানা কথা লিখেছেন।
আরও পড়ুন: নিজের জন্মদিনে সুশান্তের জন্য কেক কাটলেন সৌরভ! জানেন কেন? পাশে থাকলেন দর্শনা
স্বস্তিকা লেখেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখেছি, বাবা একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে কথা বললে চোখটা কেমন অন্য রকম হয়ে যেত। বা অন্যমনস্ক হয়ে রইলে চোখটা সেই অন্য রকম। আনমনে কথা বললেও দেখতাম চোখের মনি টা কেমন যেন ফট করে আলাদা হয়ে যেত। হটাৎ ডাকলে যদি তাকায়, সেই চোখ টা আবার আলাদা। একটু বড় হতে বুঝলাম একে বলে, ‘লক্ষ্মী ট্যারা’। বাবা কে কী মিষ্টি লাগত। ‘ওই রকম কর না চোখটা’, এটা বললেই বাবা বলত, আরে ওরম ইচ্ছে করলেই হয়না, করা যায় না।'
আর এরপরই তিনি লেখেন বাবার মতো তিনি নাকি 'লক্ষ্মী ট্যারা'। অভিনেত্রীর কথায়, ‘বাবা চলে যাওয়ার পর, অনেক রাত পর্যন্ত বোনের সঙ্গে গল্প করলে বোন মাঝে মাঝে বলত, এই দিদি চোখ টা ঠিক কর, বাবার মতন হয়ে গেছে। বা বলত, দিদি পুরো বাবার মতন তাকালি। আমি পাতা ফেলে, চোখ পিটপিট করে ঠিক করে নিতাম আর মনে মনে স্বস্তির হাসি হাসতাম।’
আরও পড়ুন: ৮৩ কোটিতে বাড়ি বিক্রি করছেন অমিতাভ! জানেন কেনা দাম কত ছিল? এই বাড়িতে ভাড়া থাকেন কৃতিও
আসলে তিনি বাবার মতোই হতে চাইতেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা তো সবাই চাই, এটাই আমাদের সুপ্ত বাসনা, আমরা যেন আমাদের বাবা মায়ের মতন হই। তাদের সবটা যেন আমাদের মধ্যে থেকে যায়। ঠিক যেমন আমি চাই, আমার আমি টা যেন আমার মেয়ের মধ্যে আশ্রয় পায়।’
তারপর অভিনেত্রী তাঁর ছবিগুলি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘গতকাল ফ্লাইট এ আসার সময় হটাৎ দেখি সূর্যটা অস্ত যাওয়ার আগে রমরমিয়ে জ্বলে উঠেছে। সারা আকাশ কমলা রঙে উজ্জ্বল আর সেই এক ফালি রোদ এসে আমার চোখটা প্রায় ঝলসে দিচ্ছে। এত সুন্দর আলো অনেকদিন পর দেখলাম। ভাবলাম, সূর্যের এত কাছে আছি কটা ছবি তুলি। ঠিক দুটো তুললাম। ওমা ছবিতে তাকিয়ে দেখি সেই বাবার মতন হয়ে আছে চোখটা। সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটা তুললাম যাতে বাবার মতন হয়ে থাকতে থাকতে আরও কটা ছবি থেকে যায়। এক ফোটা নড়াচড়া করিনি, চোখের পাতাও ফেলিনি। কিন্তু আর একটাও হল না। প্লেন টা নামা পর্যন্ত ভাবলাম, এই আকাশে বাবা থাকে, মেঘের মধ্যে, সূর্যের কিরণের মধ্যে। আমিও আছি দেখে বোধহয় টুক করে এসে জানান দিয়ে গেল। এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয়ে আলোয়ে…'
ছবিগুলি পোস্ট করে অভিনেত্রী ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘আমার মুক্তি আলোয়ে আলোয়ে…’ গানটি দেন। এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটি বাবার সঙ্গে গেয়ে তিনি একটি মিউজিক ভিডিয়ো প্রকাশ করেছিলেন কয়েক বছর আগে। ছবি, লেখা, গান সবটা নিয়ে একরাশ মন খারাপে মুক্তির আনন্দ হয়ে ধরা দেন স্বস্তিকা।