‘মা হওয়ার পর যেকোনও মহিলার কম করে ৫টা বছর বাড়িতেই থাকা উচিত।’ এমনটাই মনে করেন তনুজা কন্যা, অভিনেত্রী তনিশা মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মাতৃত্ব নিয়ে নিজের মতামত ভাগ করে নেন তনিশা। কথা প্রসঙ্গে নিজের ছোটবেলার স্মৃতিতে ফিরে যান কাজলের বোন।
ঠিক কী বলেছেন তনিশা মুখোপাধ্যায়?
তনিশা বলেন, ‘আমি যখন ছোট, তখন আমার মাও কর্মরত ছিলেন। তবে তখন আমি চাইতাম না যে উনি কাজ করুন। আমার যখন জন্মেছিলাম, তখন মাকে বাধ্য হয়েই কাজ করতে হয়েছিল পরিবারের প্রয়োজনে। কারণ, সেসময় আমাদের অত টাকা ছিল না। অনেকেই হয়ত জানেন না, তবে সেসময় মা ২-৩ শিফটে কাজ করেছেন। আমার সঙ্গে মায়ের সেসময় দেখাই হত না। তবে আমি মায়ের ঘরে ঘুমাতাম, যাতে মায়ের স্পর্শের অনুভূতি পেতে পারি। যাতে আমার মনে হয়, যে হ্যাঁ, আমার কাছেই আছে। তবে তখন ওঁকে ভোর ৫টার সময় উঠে কাজে বের হয়ে যেতে হত। তাই মা-কে নিয়ে আমার এমনই স্মৃতি রয়েছে।’
তনিশার কথায়, ‘আপনি একজন কর্মরত মহিলা, এই অনুভূতিটা আমার কাছেও দারুণ। তবে তারপরেও আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে বলব, মা হওয়ার পর মহিলাদের অন্তত ৫টা বছর বাড়িতেই থাকা উচিত। কারণ, আমি মনে করি, মায়ের মতো করে শিক্ষা কেউ দিতে পারে না। মায়ের মতো করে সন্তানকে বড় করতেও কেউ পারে না। সেসময় একটা শিশুর যা যা প্রয়োজন, তা একমাত্র একজন মা-ই দিতে পারেন। কিছু বিষয় ন্য়ানি, বাড়ির অন্যান্য লোকজন, স্কুল কেউই একটা শিশুকে সেটা দিতে পারে না, যেটা একমাত্র মা পারে।’
তবে নিজের কথা স্পষ্ট করে তনিশা বলেন, ‘আমি এটা বলতে চাইছি না যে সব ছেড়ে মহিলারা বাড়িতেই থেকে যান। তবে একটা শিশুর জীবনের প্রথম ৫টা বছর অন্তত তার সবসময় মাকে কাছে পাওয়া উচিত। তাই আমি বলব, যদি সন্তান চান, তাহলে জীবনের ৫টা বছর শিশুটিকে দিন, তারপর বাকি জীবন কাজ করুন, কোনও অসুবিধা নেই।’
আরও পড়ুন-একরত্তি শিশুকন্য়া কোলে হাজির! বিয়ে হয়নি এখনও, তবে মা হওয়ার স্বপ্নপূরণ শর্লিনের
নিজের ছোটবেলার কথায় ফিরে গিয়ে তনিশা বলেন, ‘আমিও ছোটবেলায় মাকে ছাড়তেই চাইতাম না। আমার মামা মজা করে বলতেন, আরে এতো ছাড়তেই চায় না…। আমি যখনই মাকে কাছে পেতাম চিপকে থাকতাম, এখনও এই বিষয়টা আমার মধ্যে থেকেই গেছে, আর এটা সেই ছোটবেলা থেকে। সেসময় মা কাজে যেতেন। কারণ, ওঁর সেসময় কিছু করার ছিল না। তবে মা ছেড়ে যাচ্ছে এই অনুভূতিটা এখনও আমার মধ্যে রয়ে গেছে। আর এটা আমি এখন প্রকাশ্যেই বলি।’
এদিকে তনিশার এই বক্তব্যে নেটিজেনদের অনেকেই তাঁকে সমর্থন করেছেন। অনেকেই লিখেছেন, ‘তনিশা ভুল কিছু বলেননি, এটা ভীষণভাবেই সত্যি।’ কেউ লিখেছেন, ‘তনিশা নিজে মা নন, তবে উনি তাঁ শৈশবের অভিজ্ঞতা থেক খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন।’ কারোর মন্তব্য, ‘শিশুর কাছে মায়ের ভূমিকা সত্যিই অতুলনীয়।’ কারোর কথায়, ‘তনিশা খুব সুন্দরভাবে কথাগুলি তুলে ধরেছেন।’
প্রসঙ্গত, একসময় তনুজাও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি অভিনয়ে স্বেচ্ছায় এসেছেন, এমনটা ঠিক নয়, বরং বাধ্য হয়েই করেছেন। কারণ পরিবারের আর্থিক সংকট। পরবর্তী সময়ে শোমু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তনুজার। বিচ্ছেদও হয়ে যায়। তাই তিনি কাজ ছাড়তে পারেননি। দুই মেয়ে মেয়ে - কাজল ও তানিশাকে বড় করতেই তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল। সেসময় একপ্রকার বাধ্য হয়েই মাকে ছেড়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যান কাজল ও তনিশা।