তাপস পালের বলা ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ এখনো হামেশাই উঠে আসে কথা প্রসঙ্গে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা-রাজনীতিবিদের পত্নী নন্দিনী পালকে বলতে শোনা গেল, মৃত্যুর আগে অবধি এই আফশোস নিয়ে বেঁচে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা। এমনকী, সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতারি, জেলখাটাকেও এই কথারই ‘কর্মফল’ বলে মনে করতেন।
‘ওর মুখ থেকে ভুল কথা একটা বেরিয়ে গিয়েছিল। ও নিজেও বারবার ক্ষমা চেয়েছে। আমরা পরিবারও এটা নিয়ে লজ্জিত। উনি নিজেও এই নিয়ে কখনো আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেননি, না আমরা কখনো করেছি।’ এরপরই নন্দিনীকে বলতে শোনা যায়, ২০১২ সাল নাগাদ এক দুর্ঘটনায় ফ্রন্টাল লোবে আঘাত পান তাপস পাল। মস্তিষ্কের এই অংশে আঘাত কিছুটা হলেও ভাবনা-চিন্তা করার ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছিল অভিনেতার। তিনি কখনোই এটাকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চান না। তবে তাঁর কখনো মনে হয়, এই কারণেই হয়তো সেদিন ওরকম ‘ভয়ঙ্কর ভুল কথা’ বলে ফেলেছিলেন। নিবেদিতা অনলাইনের সাক্ষাৎকারে যদিও বারবার বলেন, এটা কোনোভাবেই কোনো জাস্টিফিকেশন নয়, নিজের ভাবনাটা শুধুমাত্র ভাগ করে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভিড়ের মাঝে ঠোঁটঠাসা চুমু রাজ-শুভশ্রীর, আদুরে নিউ ইয়ার ইউভান-ইয়ালিনির মা-বাবার
‘২০১৬ সালের ৩০ জুন এই কথাটা (ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব, রেপ করে চলে যাবে-তাপসের বলা কথা) ফাঁস হয়েছিল। আর এর কদিন পর ৮ অগস্ট ওর ম্যাসিভ স্ট্রোক হয়। ও নিতেই পারল না। আমি একটা মানুষকে প্রতি মুহূর্তে মরতে দেখেছি। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। ওটা সাংঘাতিক ভুল কথা বেরিয়ে গিয়েছিল, সেটা ও জানত। তারপর নিজেকে ও ক্ষমাই করেনি কোনোদিন। কোনোদিন করেনি।’
আরও পড়ুন: কোজি কর্নার থেকে প্রভু জগন্নাথ, নিজের 3BHK ফ্ল্যাট ঘুরিয়ে দেখালেন ইমন, রয়েছে ব্যালকনিতে ছোট্ট বাগানও
এর কিছু সময় পর সিবিআই-এর হাতে রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হন তাপস পাল। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে উড়িষ্যা চলে যাওয়া, অসুস্থতা, দীর্ঘদিন জেল হাসপাতালে ভর্তি, সেখান থেকে অ্যাপোলো হাসপাতাল, তারপর না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। কিন্তু এখনও পিছু ছাড়েনি নদিয়ার নাকাশিপাড়ার জনসভায় দাঁড়িয়ে বলা ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব, রেপ করে চলে যাবে’ মন্তব্যটি। নন্দিনীর দাবি, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বিতর্কি মন্তব্যর বোঝা বয়ে গিয়েছিলেন তাপস নিজের মধ্যে। যা তাঁকে ভিতরে ভিতরে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল।
আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থার খবর দিলেন অনিন্দিতা, বেবি বাম্প নিয়েই চলছে শ্যুটিং, কবে বাবা হচ্ছেন সুদীপ
‘তাপস পাল যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন লজ্জিত ছিলেন। আমরা বাড়ির লোকেরাও খুব লজ্জিত। যখনই কথাটা ওঠে, আমাদের মাথা নত হয়। যেটা হয়েছে সেটা খুবই খারাপ।’, বলেন নন্দিনী। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ওর মানসিক একটা চাপ ছিল শেষ সময়। শুধু ভাবত, ওকে আর কেউ ভালোবাসে না। উনি দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) পাগলের মতো ভালোবাসতেন। ওঁর ধারণা ছিল, ওঁর প্রতি অন্যায়ে (হাজতবাস) দিদি খুব মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু ফিরে এসে মনে হল, কই দিদি তো কথা বললেন না, দিদি তো ফোনটা ধরলেন না। দিদি তো যোগাযোগ করলেন না। আমার মনে হয়, ওই অভিমান থেকেই সবটা শেষ হয়ে গেল। আসলে ওটা তাপসের এক্সপেকটেশন ছিল। কিন্তু এক্সপেকটেশন তো রাখতে নেই। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। তোমার যখন প্রয়োজনীয়তা থাকবে, তোমার কদর থাকবে। যখন লোকের মনে হবে, তোমাকে লাগছে না, তখন… (কেঁদে ফেলেন নন্দিনী)। তাপসেরই উচিত ছিল নিজেকে শক্ত রাখা। লোক বলত ও দুষ্টু লোক, ও খারাপ। ও যদি ১ শতাংশও খারাপ লোক হতে পারত, তাহলে বেঁচে থাকত এখনও। ওভাবে চলে যেত না।’, নিজের কথায় আরও যোগ করেন নন্দিনী পাল।