বাংলাদেশে যবে থেকে হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে তবে থেকেই একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। এবার ওপার বাংলার মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশের ইসকনের উপর হামলার ডাক দিল। হেফাজত-ই ইসলামের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রতিবাদে সরব হলেন তসলিমা নাসরিন। বাদ গেলেন না বিজেপি নেতারাও।
আরও পড়ুন: চ্যানেলের সঙ্গে ফেডারেশনের সংঘাতের জের! একসঙ্গে বন্ধ ৩ নতুন ধারাবাহিকের শ্যুটিং, কী নিয়ে সমস্যা?
কী ঘটেছে?
বাংলাদেশে বাড়ছে সাম্প্রদায়িকতা। চট্টগ্রামের মৌলবাদী সংগঠন হেফাজত-ই ইসলাম ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন তসলিমা নাসরিন। পোস্ট করলেন একটি ভিডিয়ো যেখানে দেখা যাচ্ছে সেই সংগঠনের সদস্যদের হিংসাত্মক স্লোগান দিতে। সেই ভিডিয়োতে এক ব্যক্তিকে তাঁদের মিছিলের সময় বলতে শোনা যাচ্ছে, 'একটা করে ইসকন সদস্যকে ধরো আর মেরে ফেল।'
এই ভিডিয়ো শেয়ার করে তসলিমা নাসরিন জানান বাংলাদেশে ইসকনের সদস্যরা বিপদে রয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করেন 'হেফাজত-ই ইসলাম সংগঠন আতঙ্কবাদের ডাক দিয়েছে। ওরা ইসকনের সদস্যদের মেরে ফেলতে চায়। ইসকন কি কোনও উগ্রপন্থী সংগঠন যে ওটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে?'
তিনি এদিন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে করা পোস্টে আরও জানান ইসকন একটি বিশ্বব্যাপী সংগঠন যা কখনই হিংসাকে সমর্থন করেনি বা প্রশ্রয় দেয়নি। তিনি এই বিষয়ে লেখেন, 'ইসকন তো বিশ্বের বহু দেশে আছে। কোথাও এই সংগঠনকে তো সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে হয়। ইসলামিস্ট এবং জেহাদীরা যদিও কখনই অন্য কোনও ধর্মের মানুষকে সহ্য করতে পারে না।'
একই বিষয়ে কী বললেন শুভেন্দু অধিকারী?
না, একা তসলিমা নাসরিন নন। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু অধিকারীও। বিজেপি নেতা ইসকনের উপর এই আঘাত হানার কথায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনিও একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন যেখানে সেখানকার গোঁড়া ব্যক্তিদের স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে, 'বাংলায় ইসকনের কোনও জায়গা নেই।'
এই ভিডিয়ো পোস্ট করে শুভেন্দু লেখেন, 'ওরা যদি এভাবেই চলতে থাকে এবং ইসকনকে আক্রমণ করার প্ল্যান করে তবে ওরা কিন্তু সেটার পরিণাম মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত নয় সেটা বলতে পারি। এই ভিডিয়োটি সকাল ১১টায় রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামের তেরি বাজার থেকে চিরাগী পর্যন্ত চলেছে এই মিছিল। এদের উদ্দেশ্যই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো। ওরা কী স্লোগান তুলছে শুনুন মন দিয়ে। ইসকনকে ভাঙার কথা, গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা, আগুন ধরানোর কথা বলছে।' যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন: মাত্র সপ্তাহখানেক বয়স, এখনই কাকে খুঁজছে কাঞ্চন-কন্যা কৃষভি? ফাঁস করে শ্রীময়ী লিখলেন...
প্রসঙ্গত গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ওসমান আলি ফেসবুকের পাতায় প্রথম পোস্ট করেন ইসকনকে আতঙ্কবাদী সংগঠন তকমা দিয়ে। তাঁর এই পোস্ট দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয় চট্টগ্রামের হাজারি গলি এলাকার বাঙালিরা। উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ, সেনা পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। প্রায় ১০০ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই ঘটনার পর।
এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের ইসকনের সভাপতি সত্য রঞ্জন বাড়ৈ বলেন, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঐতিহাসিকভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছে। তবে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দেশজুড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।