বিতর্ক আর তসলিমা নাসরিন, এই দুটো শব্দ যেন পরস্পরের পরিপূরক। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর পর ফের আলোচনার কেন্দ্রে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা। একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বুদ্ধদেবই পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁকে ‘তাড়িয়েছিলেন’, অভিযোগ লজ্জার স্রষ্টার। সেই কারণেই বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর চোখের জল ঝরেনি তসলিমার। কারণ একটা সময় বুদ্ধদেবের কারণে তাঁর অনেক চোখের জল ঝরেছে।
বুদ্ধদেবের বিরুদ্ধে তসলিমার অভিযোগ বিস্তর। 'দ্বিখন্ডিত' উপন্যাসকে বেআইনিভাবে ব্যান করা থেকে, ২০০৭ সালে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি করে রাখা, এবং শেষমেষ বাংলা ছাড়া করা। কিন্তু শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে থামেননি তসলিমা। বরং তাঁর নিশানায় এবার প্রয়াত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বামপন্থী লেখেক সুনীলের প্ররোচণাতেই বুদ্ধদেব তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘তাড়িয়েছিলেন’ অভিযোগ তসলিমার।
মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হাতে রাখতে তসলিমার নির্বাসন, এই তত্ত্ব মানতে না-রাজ লেখিকা। নিজের পোস্টের কমেন্ট বক্সে তিনি লেখেন, ‘৯৯% মুসলমান ভোটার আমার নাম জানে না’। এরপর বিস্ফোরক দাবি তাঁর। বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আমি চমৎকার বাস করছিলাম, কট্টর মৌলবাদিরা সমস্যা করতে চাইলে প্রথমেই করতো। সাড়ে তিন বছর বাস করার পর কেন? আমি কি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেছিলাম বা লিখেছিলাম তখন? না। বুদ্ধবাবু কার দাবিতে আমার বই ব্যান করেছিলেন? কোনও মুসলমান তো বলেনি ব্যান করতে? সুনীল গ্যাং বলেছিল। আমাকে রাজ্য থেকে তাড়াতে সুনীল গ্যাংই বলেছিল। এই গ্যাং-এর পরামর্শ মতো রাস্তার নাটকটা সাজানো হয়েছিল। ওই ছিঁচকে চোরের দল আমার নামও জানে না, আমার বইও পড়েনি। ভারতের মুসলমানরা দিল্লিতে তো বিশাল পরিমাণে। এত বছরেও তো কেউ টুঁ শব্দ করেনি আমার বিরুদ্ধে’।
হ্যাঁ, এখন দিল্লিতেই বাস তসলিমার। হালে তাঁর লেখা বইও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তসলিমার এই অভিযোগ নতুন নয়। ২০১২ সালে মৃত্যু হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। এই ঘটনার তিন বছর পর, ২০১৫ সালে তসলিমা দাবি করেছিলেন, ‘আমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর পেছনে কারা? এ প্রশ্নটি উঠলে কলকাতার অনেক লোক, জানি না কেন, দুটো নাম উচ্চারণ করেন, এক ইদ্রিস আলী আর দুই সঞ্জিব অথবা সন্দীপ ভুটোরিয়া। আমি আজ স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর পেছনে ওই দুটো লোকের কোনো ভূমিকাই নেই। যে দুজন লোক অপকর্মটি করেছেন, তাঁরা—এক. বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর দুই. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।’