কিছুদিন আগেই কোটা আন্দোলনকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ। ছাত্রদের সঙ্গে মানুষের আন্দোলন জুড়ে যাওয়ার পর সেদেশের পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। আন্দোলনের তীব্রতা ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি এতটাই জোরালো হয় যে শেষপর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন হাসিনা।
বাংলাদেশের সঙ্গে পরিস্থিতি, ঘটনা প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ এক না হলেও এপার বাংলাও এই মুহূর্তে উত্তাল। আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ক্ষোভ ক্রমাগত জোড়ালো হচ্ছে। এরাজ্যেও প্রতিবাদে নেমেছে ছাত্র থেকে জনতা। এদের মধ্যে কেউ বিরোধী রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন, কেউ আবার রাজনৈতিক মতামত ভুলে আম জনতা হয়েই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবে যেভাবেই হোক, পথে নেমেছেন অনেকেই। প্রতিবাদী জনতা-ছাত্রছাত্রী তারকাদের মধ্যে কেউ কেউ পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্য়াগের দাবিও তুলেছেন। আর তাই পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের আন্দোলনের তুলনা টেনে মতামত জানালেন প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
ঠিক কী লিখেছেন তসলিমা?
তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে যেমন পোলাপানেরা মিছিল করে সরকার ফেলে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই তেমন করে সরকার ফেলে দিতে চাইছে। কিন্তু তা কি সম্ভব? পশ্চিমবঙ্গের মমতা দিদি তো বাংলাদেশের হাসিনা আপার মতো ভোটারবিহীন নির্বাচনে জিতে আসেননি। মানুষের জীবনের যেখানে ১০ পয়সা দাম নেই, সেখানে ১০ লাখ টাকা দিয়ে জীবন কিনলে আজ চেঁচালেও দুদিন পরই দুহাত পেতে নেবে।’
নিজের এই পোস্টে তসলিমা ঠিক কী বলতে চেয়েছেন তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি নেটপাড়ার। তসলিমার কথায়, বাংলাদেশের মতো এরাজ্যে সরকার ফেলা অত সহজ নয়। কারণ, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় মানুষের ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছেন। আবার মৃতার পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রীর ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি লেখিকা। তাঁর মনে হয়েছে, মানুষের জীবনের দাম যেখানে ১০ পয়সাও নয়, সেখানে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে জীবন কিনলে আজ চেঁচালেও দুদিন পরই লোককে টাকা দিয়ে চুপ করানো যাবে।
তবে তসলিমার এহেন মন্তব্যে সহমত হতে পারেননি, এরাজ্যের বহু বাঙালি। একজন লিখেছেন, ‘ভিকটিমের বাবা মা ১০ লক্ষ টাকা রিফিউজ করে প্রকৃত খুনী ধর্ষকদের বিচার চেয়েছেন। খুনী বা খুনী সরকারের কাছে মানুষের মূল্য নেই। কিন্তু সচেতন মানুষ তো টাকা দিয়ে মিটিয়ে নিতে চাইবেন না তাঁরা অবশ্যই সুবিচার চাইবেন, আন্দোলন করবেন। সেটাই স্বাভাবিক।’ কারোর কথায়, ‘পঃবঃ সঠিক ভোট হয়না দিভাই ! স্ব- চক্ষে দেখি ! যতবার ভোটদান করতে গিয়েছি দেখেছি ! ভান্ড চেটে খেতে ওস্তাদ !’
আরও পড়ুন-আরজি কর কাণ্ডে রচনার ভূমিকায় জনতার ক্ষোভ, তার জেরেই কি বাতিল হয়ে গেল দিদি নং1-এর অডিশন?
কেউ আবার তসলিমার কথায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘দিদি ওনাকে নিয়ে আপনার খুব বেশি জ্ঞান আছে বলে মনে হচ্ছে না। উনি ওনার গুণ্ডা বাহিনী নিয়ে সারা পশ্চিমবঙ্গে কি পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন। গত পঞ্চায়েত ভোট বেশিরভাগ জায়গায় গায়ের জোরে দখল করেছে। এমনকি ব্যালট খেয়ে নেবার ঘটনাও ঘটেছে। ভোটে বুথ জ্যম ছাপ্পা ভোট, ভোটার কে ভয় দেখানো, বোমাবাজি, অস্ত্র নিয়ে পাড়া দাপানো এসব খুব সাধারণ ঘটনা এছাড়া রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি। একটা স্ফুলিঙ্গের প্রয়োজন ছিল। আরজিকরের ঘটনা আর তাকে ধামা চাপা দেবার মরিয়া প্রচেষ্টা সেই কাজটা করে ফেলেছে। আপনাকে সাজেস্ট করব সাম্প্রতিক কলকাতার বাংলা মিডিয়া কভারেজ গুলো দেখুন। সব বুঝতে পারবেন। আর আপনার কাছে এরকম কিছু না বুঝে হঠাৎ মন্তব্য আশা করি না। আপনি একজন চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব।’
কারোর কথায়, ‘না দিদি একথা তুমি হয়তো ভুল বললে। মধ্যবিত্তরা এখনো হয়তো কিছু মোরাল ভ্যালু নিয়ে বাঁচে। মেয়েটির বাবা খুব কষ্ট করেই মেয়ে কে ডাক্তার করেছিলেন। তারপরও মেয়ের যা পরিনতি উনি দেখলেন তার মূল্য হয়তো ১০ লাখ হতে পারেনা।’ কেউ আবার সাফ লিখেছেন, ‘এতো অপমান জনক কথা’। এমনই অসংখ্য মন্তব্য উঠে এসেছে।