বাংলাদেশে ব্রাত্য তসলিমা নাসরিন। তিনি নিজে যেমন ওপার বাংলায় যেতে পারেন না, তেমনই তাঁর বই রাখার অপরাধে কিছুদিন আগে বাংলাদেশ বইমেলা যে রণক্ষেত্রর চেহারা ধারণ করেছিল সেটাও সকলে দেখেছেন। তিনি নিজে বারবার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন প্রকাশকের হয়ে। এবার এদিন একটি ভিডিয়ো লেখিকা পোস্ট করেছেন যেখানে এক বাংলাদেশি যুবককে তাঁর বই হাতে লেখিকার বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে সেই ব্যক্তি বইটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে পুড়িয়ে দিচ্ছেন।
কী ঘটেছে?
এদিন যে ভিডিয়ো তসলিমা নাসরিন পোস্ট করেছেন সেখানে এক বাংলাদেশি যুবকের হাতে পঞ্চকন্যা নামক একটি বই দেখা যাচ্ছে। সেই বইটি তিনি ছিঁড়ছেন এবং তসলিমার লেখার বিরোধিতা করছেন। এই ভিডিয়ো পোস্ট করে এদিন লজ্জা লেখিকা প্রতিবাদ করে লেখেন, 'আমি নিশ্চিত এই ছেলেটি আমার কোনও বই পড়েনি। সে বলছে আমি নাস্তিক, আমার বইয়ে সমকামিতা আর ইসলামের সমালোচনা ছাড়া আর কিছু নেই। জনতাকে উপদেশ দিয়েছে, আমার বই দেখলে যেন পুড়িয়ে ফেলে, আর আমাকে দেখলে যেন আমাকে জবাই করে। নিজেও জোর দিয়ে বলেছে, আমাকে দেখলে সে আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে আমাকে। এই হল আমার দেশ এবং আমার দেশের নতুন প্রজন্ম। ছেলেটি হয়তো কোথাও কারও কাছে শুনেছে আমি নাস্তিক, সেই থেকে আমাকে এবং আমার বইগুলোকে পুড়িয়ে ফেলাই সে তার কর্তব্য বলে মনে করছে। নাস্তিকদের ঘৃণা করতে কোথায় শিখেছে সে? নিশ্চয়ই মসজিদে, মাদ্রাসায় আর ওয়াজ মহফিলে।'
শুধু তাই নয়, সেই যুবকের ভুল ধরিয়ে তসলিমা লেখেন, 'কোনও বইয়ের বিরুদ্ধে বলার আগে বইটি যে পড়তে হয় ছেলেটি শেখেনি। শেখেনি কারও মত পছন্দ না হলে তাকে জবাই করতে হয় না, তাকে পুড়িয়ে মারতে হয় না। শেখেনি বই পুড়িয়ে লাভ নেই, এতে চরম অসহিষ্ণুতাই প্রকাশ পায়। শেখেনি হিংসে ঘৃণা অসহিষ্ণুতা কোনও মানবিক গুণ নয়। তাকে মানবিক হতে, উদার হতে, অন্যের বাকস্বাধীনতায়, এবং মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করতে, সভ্য হতে তাকে কেউ শেখায়নি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেখানো। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করেনি। এই বেসিক শিক্ষার অভাবে দেশ আজ অসভ্য আর অশিক্ষিত লোকে ভরে উঠেছে।'
প্রসঙ্গত এদিন যে পঞ্চকন্যা নামক বইটি সেই যুবকের হাতে দেখা গিয়েছে সেটাও যে তাঁর বই নয় সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তসলিমা। তিনি লেখেন, 'পঞ্চকন্যা নামের একটি বই পোড়াচ্ছে ছেলেটি । আমি কিন্তু পঞ্চকন্যা নামে কোনও বই লিখিনি। আমার চারটে উপন্যাসিকার সংকলনের নাম ছিল 'চার কন্যা'। পাইরেসির পন্ডিতেরা নিশ্চয়ই আরেকটি গল্প জুড়ে দিয়ে পঞ্চকন্যা নাম দিয়েছে বইয়ের। আমার গল্পগুলোয় রয়েছে নারীর বঞ্চনা আর লাঞ্ছনার কাহিনী। ছেলেটির মা, বোন, খালা, ফুপু, কাকি, মামী, নানি, দাদির গল্পও নিশ্চয়ই আছে বইটিতে।'