RG কর নিয়ে শুরুর দিন থেকেই সোচ্চার স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। শুরু থেকেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন তিনি। ডাক্তারদের সঙ্গেও প্রতিবাদে থেকেছেন, আবার নাগরিক সমাজের প্রতিবাদেও থেকেছেন। এমনকি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'উৎসব'-এ ফেরার বার্তাতেও প্রকাশ্যেই 'না' বলেছেন স্বস্তিকা। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। তবে সমস্যা তৈরি হয়েছে ‘টেক্কা’র পোস্টার মুক্তি পাওয়ার পরই। স্বস্তিকা সেই প্রমোশনাল পোস্টার শেয়ার করলে, ছবির প্রচারে টেক্কা নিয়ে মুখ খুলতেই ট্রোলের মুখে পড়তে হয়েছে স্বস্তিকাকে।
যদিও স্বস্তিকার সাফ কথা, ‘আমি পুজোয় আছি, উৎসবে নেই। আমি নেই, এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত স্টান্স! আপনাদের তো বলিনি যে থাকবেন কী থাকবেন না। আপনাদের ইচ্ছে হলে থাকবেন না হলে থাকবেন না। এই মতো কারুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায়না। ইচ্ছে হলে আমার সিনেমা দেখবেন না হলে দেখবেন না।’ তবে এরপরেও উৎসবে না থাকার কথা বলেও দেবের সঙ্গে আসা ছবির প্রচার করার স্বস্তিকাকে নিয়ে কিছু লোকজনের ট্রোলিং বন্ধ হচ্ছে না।
তবে এই পরিস্থিতিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হয়ে সওয়াল করেছেন অভিনেতা, পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। নিজের বক্তব্য জানিয়ে ফেসবুকের পাতায় একটা ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন তথাগত। কিন্তু কী বলেছেন তিনি?
তথাগত বলেন, ‘আমার দুটো হাত আছে, ঠিক আপনাদের মতো, দুটো চোখ আছে, কান আছে, নাক আছে, একটা কান আছে, একটা মেরুদণ্ড আছে, আর আছে একটা পেট, যার জন্য মাথা হেঁট। আমি চাই বা না চাই, আমি আন্দোলন করি বা না করি সেটা আমার দায়বদ্ধতা, সংসারের জন্য দায়বদ্ধতা, জীবন-ধারনের জন্য দায়বদ্ধতা। এই যেমন আমার এখন ইচ্ছে করছে, আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে, তবে আমি পারছি না, কারণ আমার দায়বদ্ধতা কাজের প্রতি। কাজের পর যেটুকু সময় পাব, আমি তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াব। কিন্তু কাজ তো বন্ধ করতে পারছি না। কারণ, আমরা যাঁরা শিল্পী, তাঁরা ইন্ডাস্ট্রি থেকে যা রোজগার করি, সেই টাকাটা এত নয় যে বলতে পারি, আমরা ৬ মাস কাজ করব না, তারপরে আবার কাজ করব! আমরা যা রোজগার করি তা জীবনধারণ করার মতো, বা তার থেকে একটু বেটার জীবন কাটানোর জন্য…। ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কারোর কাছেই এত টাকা নেই যে কাজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকতে পারবেন, তাহলে তাঁদের খাবর জুটবে না।….’
তথাগত বলেন, ‘স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ভালো অভিনেত্রী। ওনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপ নেই, খুবই স্বল্প আলাপ। তবে উনি সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য রাস্তায় থেকেছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মাঝ রাতেও রাস্তায় থেকেছেন, ডাক্তারদের জন্যও থেকেছে। যেখানে ক্যামেরা, মিডিয়া কিছুই নেই, সেখানেও থেকেছেন সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। ডাক্তারদেরও পাশে দাঁড়িয়ে এই বিশ্বাস জুগিয়েছেন যে, আমি তোমাদের পাশে আছি। শুধু স্বস্তিকা নন, আরও অনেক শিল্পী পথে নেমেছেন, সেই সকল শিল্পীদের তরফেই আমি আজ কথাগুলো বলছি। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের একটা সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত টেক্কা। দেব আছেন, সৃজিত আছেন। এই ছবিটা নিয়ে স্বস্তিকা কেন প্রমোশন করেছেন, তাই নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। এরা সমস্ত দূর্নীতিগ্রস্ত খারাপ লোক, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। আর এঁরা স্বস্তিকাকেও তাঁদের দলে টানতে চাইছেন। প্রমাণ করতে চাইছেন স্বস্তিকাও দূর্নীগ্রস্ত।
কারণ, স্বস্তিকা বলেছেনও উৎসবে ফিরব না। কোন উৎসব? দুর্গাপুজো যদি অক্টোবরে না হলে ডিসেম্বরে হতো, তাহলেও কিন্তু টেক্কা অক্টোবরেই মুক্তি পেত। সিনেমা রিলিজ শুধু উৎসবের সময় হয় নাকি! অন্য সময় হয় না? আমরা শিল্পীরা পেশাগতভাবে দায়বদ্ধ। কাজের জন্য যে টাকাটা পাই, তাতে শুধু অভিনয় নয়, তার প্রমোশনের জন্যও আমরা দায়বদ্ধ। অর্থাৎ সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই আমাদের রুটি-রুজি। বিনোদন দেওয়াই আমার কাজ। আজ প্রতিবাদ করছি বলে বিনোদন দেওয়া বন্ধ করে দেব নাকি! কারণ, প্রচুর মানুষ প্রতিবাদ করছে না, শুধু বিনোদন খুঁজছেন। আবার অনেকে প্রতিবাদ করছেন, কখনও রিল্যাক্স হওয়ার জন্য বিনোদনও খুঁজছেন। বিনোদন তো বন্ধ হবে না, অন্য কোনও সেক্টরও তো বন্ধ হচ্ছে না।’
তথাগত বলেন, স্বস্তিকা টেক্কার প্রমোশন করেছেন, কারণ তাঁর ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তিনি পেশাগতভাবে দায়বদ্ধ। কারণ, তিনি তাঁর জন্য অর্থ নিয়েছেন, বহু আগে, যখন শ্যুটিং করেছেন। তাহলে আজ কী বলবেন! যে প্রতিবাদ করছি বলে টেক্কার প্রমোশন করব না? উনি পেশাগতভাবে দায়বদ্ধ, উনি প্রতিবাদ করছেন, সেটা ওনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত… এখনে উৎসবে না ফেরার অর্থ সিনেমা দেখব না, গান গাইব না নয়, এখনে উৎসবে ফিরব না অর্থৎ প্রতিবাদ ভুলে উৎসবে ফিরব না। প্রতিবাদও থাকবে, গানও থাকবে, অভিনয়ও থাকবে, তবে এগুলো প্রতিবাদ ভোলার অজুহাত হবে না।…'।