জ্যাকলিন ফার্নান্ডিজের পর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ালো আরও এক নায়িকার। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল অভিনয়ের জগতে পা দেওয়ার আগে তিনি আয়কর আধিকারিক হিসাবে সরকারি চাকরি করতেন। হ্যাঁ, ২৬৪ কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের মামলায় ইডির নজরে অভিনেত্রী কৃতি বর্মা। রিয়ালিটি শো-এর পরিচিত মুখ কৃতি। রোডিজ এক্সট্রিম (২০১৮) মাধ্যমে লাইমলাইটে আসেন দিল্লির এই কন্যে, এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে গ্ল্যামার জগতেই কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বিগ বস ১২-এ অংশ নেন কৃতী। বেশকিছু ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিযোগ এক ইনকাম-ট্যাক্স আধিকারিক ২৬৪ কোটি টাকা গায়েব করে দিয়েছেন নিজের সিনিয়র আধিকারিকের লগইনের অধিকারের অপব্যবহার করে। এই আর্থিক তছরুপের মূল অভিযুক্ত ভূষণ পাটিল, যার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন কৃতি। বেআইনিভাবে গায়েব করা ওই ২৬৪ কোটি টাকার অধিকাংশই নাকি পাটিলের অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে। যে টাকা দিয়ে বেশকিছু সম্পত্তি কেনা হয়েছে, যার মধ্যে বহু সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কৃতি বর্মার নামে।
এই মামলায় ইতিমধ্যেই বহুবার ইডির জেরার মুখে পড়েছেন কৃতি। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিনেত্রী। আইটি টিডিএস রিফ্যান্ড ব়্যাকেটের সঙ্গে যোগ উড়িয়ে কৃতি জানান, পাটিলের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন একটি ডান্স শো-এর পারিশ্রমিক হিসাবে এক কোটি টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছিল।
ইডি-র আধিকারিকদের কৃতি জানিয়েছেন, ২০২০ সালে পানভেলে এক ডান্স শো চলাকালীন মূল অভিযুক্ত ভূষণ পাটিলের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। এরপর মাস ছয়েক সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা, তবে অভিযুক্তর অপরাধমূলক গতিবিধির কথা জানতে পেরে তড়িঘড়ি সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। এই তছরুপের সঙ্গে তাঁর যোগ নেই, দাবি কৃতি বর্মার।
ইডি সূত্রে খবর, পাটিলের সঙ্গে এই কেলেঙ্কারির মূল মাথা হল তানাজি মণ্ডল অধিকারি। সিনিয়র ট্যাক্স অ্যাসিসটেন্ট হিসাবে কাজ করতেন তানাজি। সিনিয়র আধিকারকিদের বিশ্বাস জিতে তাঁদের লগইনের যাবতীয় তথ্য কুক্ষিগত করেন, পরে টিডিএস রিফান্ডের ২৬৪ কোটি টাকা পাটিলের এক কোম্পানির অ্যাকাউন্টে বেআইনিভাবে ট্রান্সফার করেন। ২০১৯-এর নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ বারে এই বিরাট অঙ্কের টাকা সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে উড়িয়ে দেন তানাজি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রমোশন হয় তাঁর, আইটি ইন্সপেক্টরের পদ পান তানাজি। তবে এই দুর্নীতি ফাঁস হতে বেশি সময় লাগেনি। যে ব্যাঙ্কে পাটিলের অ্যাকাউন্ট ছিল, সেই ব্যাঙ্কের তরফে সরকারি অ্যাকাউন্ট থেকে এত কোটি টাকার ট্রান্সফার দেখে রেড ফ্ল্যাগ জারি করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সিবিআই পাটিল, তানাজি-সহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে এফআইআর দায়ের করে। সেই এফআইআরে নাম ছিল না কৃতি বর্মার।
পরবর্তীতে সিবিআইয়ের এফআইআর মতো আর্থিক তছরুপের মামলা রুজু করে ইডি। মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক থেকে ইতিমধ্যেই ৭০ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি, যে সম্পত্তির কিছু অংশ কেনা হয়েছে কৃতি বর্মার নামে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট থেকে ৯৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। সব মিলিয়ে আর্থিক তছরুপের ১৬৬ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।