চলতি বছরের গোড়ার দিকের ঘটনা। এক মহিলাকেন্দ্রিক ডিটেক্টিভ ছবির সেটে অভিনেত্রীকে শট বোঝাচ্ছিলেন অরিন্দম শীল। শট বোঝানোর আছিলায় পরিচালক তাঁকে হেনস্থা করেছেন, এই অভিযোগে মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন টলিউডের তরুণ অভিনেত্রী। অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে অতীতেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘোরফেরা করেছে, কিন্তু সাহস করে কেউ মহিলা কমিশনে যাননি।
পরিচালকের নামে অভিযোগ অসম্মতি ছাড়াই অভিনেত্রীকে কোলে বসিয়ে চুমু খান তিনি। মহিলা কমিশনের সামনে চিঠি লিখে অভিনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অরিন্দম। এরপর গত শনিবার পরিচালককে সাসপেন্ড করে পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টর্স গিল্ড। তারপর থেকেই একঘরে পরিচালক। পরিচিতমহলে আক্ষেপ করে বলেছেন, ইন্ডাস্ট্রির কোনও বন্ধুই তাঁর খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। একমাত্র কয়েকজন প্রযোজকের ফোন এসেছিল। একই আবাসনে থাকেন এমন ঘনিষ্ঠ টলি সেলেবরা একটা মেসেজ পর্যন্ত করেননি।
মিডিয়াতে অরিন্দমের সাফাই, ওই ঘটনা স্রেফ একটা ‘অ্যাক্সিডেন্ট’। পরিচালকের এই সাফাইয়ের কড়া জবাব দিলেন অভিযোগকারিণী। অরিন্দম জানিয়েছেন,‘শুট চলাকালীন ওর গালের পাশে আমার মুখটা লেগেছিল একবার। এটা পুরোটাই একটা অ্যাক্সিডেন্ট।’ এই নিয়ে পালটা অভিনেত্রীর প্রশ্ন, ‘গালে চুমু খাওয়া কী ভাবে অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে? ওটা নাকি শিল্পসত্ত্বা থেকে হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারেনি আমার খারাপ লেগে যাবে।’
অভিনেত্রীর কথায়, পরিচালকের ধারণা ছিল এই ঘটনার জেরে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তিনি। হেসে কথা বললেই অভিনেত্রীদের সঙ্গে যেমন খুশি আচরণ করা যায় না, স্পষ্ট বার্তা তাঁর। এই সময়-কে তিনি বলেন, 'ওর কাছে বিষয়টা এতটাই সাধারণ যে, কাউকে না জিজ্ঞেস করে, তার পারমিশন ছাড়াই এমন অসভ্যতা করা যায়। এটা এত বড় ইস্যু হতে পারে, ভাবতেই পারেনি।’
আজকাল ঘনিষ্ঠদৃশ্যের শ্যুটিংয়ে বলিউডে ইনটিমেসি কোর্ডিনেটর থাকেন। টলিউডে সেই চল নেই, তবে ওইদিন শ্যুটিং সেটে একজন মহিলাও ছিল না বলে জানান অভিযোগকারিণী। তবুও তিনি শ্যুটিং থামাননি। এই নিয়ে জুলাই মাসে প্রথম মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানান। টেলিপাড়ার পরিচিত নাম হলেও সিনেমার জগতে এখনও সেভাবে পায়ের নীচে মাটি শক্ত হয়নি তাঁর। তবে আরজি করের ঘটনার পর মানুষ যেভাবে নারীর বিচার চেয়ে পথে নেমেছে, সেই বিষয়টি সাহস জুগিয়েছে তাঁর মনে।
মহিলা কমিশনের তরফে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে অভিযোগকারিণী যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাতে পাশে আছে কমিশন। এবার কি অরিন্দমের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবেন অভিনেত্রী? সেই ছবিরই বা ভবিষ্যত কী? সেই সব প্রশ্ন ঝুলেই রইল।