বলিপাড়া হোলি সেলিব্রেশনের রেশ এখনও কাটেনি, তারই মধ্যে এসেছে খারাপ খবর। অভিনেতা, কৌতুকশিল্পী সতীশ কৌশিক আর নেই, বৃহস্পতিবার সকালে আকষ্মিক এমন খবরে মন খারাপ শিল্পী ও অভিনয় দুনিয়ার। তবে শুধু অভিনেতা কিংবা কৌতুকশিল্পী হিসাবেই নয় পরিচালক এবং প্রযোজক হিসাবেও কাজ করেছেন সতীশ। চলুন স্মৃতির সরণি বেয়ে ফিরে দেখা যাক সতীশ কৌশিকের ফেলে আসা জীবন।
১৯৫৬ সালের ১৩ এপ্রিল, হরিয়ানার মহেন্দ্রগড়ে জন্ম হয়েছিল সতীশ কৌশিকের। হরিয়ানাতেই প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে সতীশ চলে আসেন দিল্লিতে। ১৯৭২ সালে দিল্লির কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। এরপর ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা এবং ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিলেন থিয়েটার অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন সতীশ কৌশিক। মিস্টার ইন্ডিয়া ছবিতে ক্যালেন্ডারের চরিত্রে তাঁর এখনও সিনেমাপ্রেমীদের মনে বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এছাড়াও সতীশ অভিনীত বেশকিছু কমেডি চরিত্র সকলের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। তারমধ্যে 'দিওয়ানা' ছবিতে পাপ্পু পেজার এবং ব্রিটিশ ছবি 'ব্রিক লেন'-এ চানু আহমেদের চরিত্রটি উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০ সালে 'রাম লক্ষণ' এবং ১৯৯৭ সালে ‘সাজন চলে শশুরাল-এর জন্য দু’বার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন সতীশ কৌশিক।
থিয়েটার অভিনেতা হিসেবে, হিন্দি নাটক ‘উইলি লোম্যান’এ উল্লেখযোগ্য ভূমিকয় অভিনয় করেছিলেন সতীশ, এছাড়াও কাজ করেছেন ‘সেলসম্যান রামলাল’ নাটকে, যেটা কিনা আর্থার মিলারের ডেথ অফ আ সেলসম্যানের একটি রূপান্তর। কাজ করেছেন চিত্রনাট্যকার হিসাবেও। কুন্দন শাহের কমেডি ক্লাসিক 'জানে ভি দো ইয়ারোঁ (১৯৮৩) এর জন্য সংলাপ লিখেছিলেন সতীশ কৌশিক।
পরবর্তী সময় পরিচালক হিসাবে কাজ করেন সতীশ কৌশিক। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি শ্রীদেবী অভিনীক ‘রূপ কি রানি চোরো কা রাজা’, যেটি ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায়। দ্বিতীয়টি ছিল ‘প্রেম’ (১৯৯৫), আর এই ছবির হাত ধরেই বলিউডে পা রাখার কথা ছিল তাবুর। যদিও দুটি ছবিই বক্স অফিসে বিফল হয়। তবে সতীশ হাল ছাড়েননি। ১৯৯৯ সালে হিট ছবি 'হাম আপকে দিল মে রহতে হ্যায়' ছবির পরিচালক ছিলেন সতীশ। ২০০৫ সালে অর্জুন রামপাল, আমিশা প্যাটেল এবং জায়েদ খানকে নিয়ে 'বাদা' ছবির পরিচালক ছিলেন তিনি।
এছাড়াও টেলিভিশন দুনিয়াতেও তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। ‘ফিলিপস টপ টেন’ শোটি লেখক এবং সঞ্চালক ছিলেন সতীশ কৌশিক। ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি ড্রামা’-তে নবাব জং বাহাদুরের ভূমিকায় তাকে অভিনয় করা হয়েছিল সতীশ। পরবর্তী সময়ে বন্ধু অনুপম খেরের সঙ্গে মিলে করোলবাগ প্রোডাকশনহাউস খোলেন সতীশ কৌশিক। হিট ছবি ‘তেরে নাম’ (২০০৩) এর সিক্যুয়াল তৈরি সিদ্ধান্ত নেন সতীশ কৌশিক। ‘উড়তা পাঞ্জাব’ (২০১৬) ছবিতে তয়াজির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
১৯৮৫ সালে শশী কৌশিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সতীশ কৌশিক। ১৯৯৬ ছেলে শানুর যখন মাত্র দু'বছর বয়স তখনই তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে, তার মেয়ে বংশিকার জন্ম হয় একজন সারোগেট মায়ের সাহায্য নিয়ে।
কৌশিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, পার্শ্বনাথ ডেভেলপারদের সঙ্গে মিলে চণ্ডীগড় ফিল্ম সিটি প্রকল্পের অংশীদার হন। চণ্ডীগড়ের সারাংপুর গ্রামে ৩০-একর জমি কেনেন। যদিও বিতর্কের মুখে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এই মাল্টি-মিলিয়ন প্রকল্পটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।