একজন বাবার কাছে দেশ আগে না সন্তান? বিশেষ করে সেই বাবা যদি জাতির জনক হন? কাকে তিনি আগে রাখবেন? এই প্রশ্ন বোধহয় নিজের গোটা জীবনেও মহাত্মা গান্ধী পাননি। যদিও এই ইতিহাস বরাবর পর্দার আড়ালে থেকে গিয়েছে। বাবার আদর, স্নেহ পাওয়ার জন্য ছটফট করেছেন গান্ধীজির বড় ছেলে হরিলাল। কিন্তু তিনি কি সেই আদর বা ভালোবাসা পেয়েছিলেন? আদতে তিনি তো সবার বাপু ছিলেন। আর সবার বাপুর ভালোবাসা সবার মধ্যেই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে দোষ দেওয়া যায় কি এতে? তিনি যে জাতির জনক, মহাত্মা। দেশ, দেশবাসীকে ফেলে কী করে নিজের সন্তানকে আগে রাখেন তিনি? এক বাবা এবং তাঁর বড় সন্তানের মধ্যে যে টানাপোড়েন সেটাই দেখা যাবে নতুন নাটক মহাত্মা বনাম গান্ধীতে। এটি চেতনা নাট্যদল নিয়ে আসছে।
কিন্তু হঠাৎ পিতা বনাম পুত্র কেন? এই বিষয়ে এই ছবির অন্যতম অভিনেতা সুজন নীল মুখোপাধ্যায় বলেন, 'তিনি যেমন একদিকে মহাত্মা, বা জাতির জনক। গোটা বিশ্বের কাছে বাপু। তেমনই তিনি তাঁর সন্তানদের কাছে বাবা। এই নাটকে উঠে আসবে জাতির জনক বাপু এবং হরিলালের বাবার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছিল সেই কাহিনি। ছেলের সঙ্গে গান্ধীজির ভাবনা বা আদর্শের কোনও মিল ছিল না, তাঁদের মধ্যে যে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছিল সেটা এখানে ফুটে উঠবে।'
তার মানে কি জাতির জন্য লড়াই করতে গিয়ে তিনি কি একজন বাবা হিসেবে ব্যর্থ হয়েছিলেন? এই বিষয়ে তিনি বলেন, 'বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন হরিলাল। মূলত আদর্শগত ভাবে। তাঁদের দূরত্ব ভীষণ বেড়ে গিয়েছিল। যদিও গান্ধীজির মৃত্যুর মাত্র ৬ মাসের মধ্যে তিনিও মারা যান। সেই ঘটনাও দেখা যাবে এই নাটকে।'
এই নাটকে কি দেখা যাবে তবে বাবা ছেলের দ্বন্দ্ব নাকি ইতিহাস? এই বিষয়ে সুজন নীল বলেন, 'ইতিহাস সব নাটকেই থাকে, সে মেফিস্টো হোক বা ব্যারিকেড। কিন্তু এই নাটকে দেখা যাবে বাবা-ছেলের দ্বন্দ্বের কথা। একটা চেনা গল্প দেখতে এসে ইতিহাস জানবেন দর্শকরা।'
এটি একটি তিন ঘণ্টার নাটক। অজিত দলভী এই উপন্যাসের নাট্যরূপ লিখেছিলেন। সেটার ভিত্তিতেই অরুণ মুখোপাধ্যায় এই নাটক লিখেছেন। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন নাটকের আবহসঙ্গীত। এর আগে এই নাটক নানা ভাষায় হয়েছে। কিন্তু বাংলায় এই প্রথমবার।
এখানে গান্ধীর চরিত্রে থাকবে অনির্বাণ চক্রবর্তী, এবং হরিলালের চরিত্রে অভিনয় করবেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে কস্তুরবা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করবেন নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় এবং গুলাব গান্ধী, হরিলালের স্ত্রীর চরিত্রে দেখা যাবে মেরি আচার্যকে। তবে অনির্বাণকে তো গান্ধীর মতো দেখতে নন। তবে? কীভাবে এই চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন তিনি? অভিনেতার কথায়, 'চলচ্চিত্রে ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বাইরের চেহারার সাদৃশ্য থাকা যতটা জরুরি নাটকে ততটা প্রয়োজন হয় না। নাটকটার মধ্যে দিয়ে যা বলতে চাওয়া হয়েছে সেটাই থিয়েটারের মঞ্চে বেশি জরুরি। দর্শকরাও অনেক কিছু মেনে নেন এই পরিবর্তনের সীমাবদ্ধতার কথা ভেবে। নইলে আমরাও তো প্রস্থেটিক মেকআপের কথা ভাবতাম।' এছাড়া তিনি নিজেকে তৈরি করতে নানা উপন্যাস পড়ছেন, অন্যান্য রেফারেন্স দেখছেন।
জানা গিয়েছে গ্রুপ থিয়েটারের ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে রবীন্দ্র সদনে ৮টি নতুন নাটক দেখানো হবে মুখোমুখি নাট্যদলের উদ্যোগে। মুখোমুখি নাট্যদলের এই বছর ৩০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। সেই উপলক্ষ্যে আগামী ১৯ এপ্রিল মহাত্মা বনাম গান্ধী নাটক মঞ্চস্থ হবে প্রথমবার।