প্রয়াত বাংলা রঙ্গমঞ্চের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার বাসভবন থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। এদিন সকালে পরিচারিকা এসে দেখেন দরজা খোলা, মাটিতে পড়ে রয়েছেন ঊষা দেবী। চিকিত্সক এলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা গিয়েছে সম্প্রতি ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে, তারপর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই অভিনেত্রী তথা নাট্যকার। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
১৯৪৫ সালে রাজস্থানের যোদপুরে জন্মগ্রহন করেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। সত্তর ও আশির দশকে বাংলা রঙ্গমঞ্চের অন্যতম প্রথিতযশা শিল্পী ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে হিন্দি থিয়েটার গ্রুপ 'রঙ্গকর্মী' প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মহাভোজ, রুদালি, কোর্ট মার্শাল এবং অন্তর্যাত্রার মতো নাটকগুলো প্রস্তুত করেছিল এই নাট্যদল। তাঁর হিন্দি নাটকেও দীর্ঘ বাংলায় সংলাপ থাকত। এটাই ছিল রঙ্গকর্মীর বৈশিষ্ট্য। নাট্যকার হিসাবে কাজ শুরুর আগেই, ১৯৭০ সালে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। সংগীত কলা মন্দিরে তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক ছিল 'মিট্টি কি গাড়ি' (শূদ্রক লিখিত 'মৃচ্ছকটিকম' ভিত্তিক) , যেখানে তিনি নটী বসন্তসেনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। নাটক পরিচালনার আগে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং বিভাস চক্রবর্তির পাশাপাশি তৃপ্তি মিত্র এবং মৃণাল সেনের কাছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। মূলত তাঁর হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি থিয়েটারে পুনরুত্থান সম্ভবকর হয়েছিল।
তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দশকে তার পরিচালনর কাজ শুরু করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই তার কর্মচাঞ্চল্যের ধারা এবং নবীন প্রজন্মকে নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ ঐকতানে বড়ো ধরনের পরিবর্তন এনে শহরের হিন্দি থিয়েটারে একটা পুনরুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
১৯৯৮-এ ‘সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি’র তরফে পুরস্কৃত করা হয়েছিল ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়কে়। ‘গুড়িয়া ঘর’ নাটকে অভিনয়ের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মানও অর্জন করেছিলেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। ও হেনরি লিখিত 'দ্য গিফট অফ দ্য ম্যাজাই' অবলম্বনে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত হিন্দি ছবি রেনকোটের যৌথ কাহিনিকার ছিলেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়।
নাট্যকার, অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন শিক্ষিকা ও সমাজকর্মী হিসাবেও আজীবন কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ১৯৭০ সাল থেকে একটানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে হিন্দির অধ্যাপিকা ছিলেন ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়। অবশেষে ৭৫ বছর বয়সে এসে থেকে গেল তাঁর যাত্রা। এই বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকের ছায়া সাংস্কৃতিক জগতে।