‘আজাবে দিল তেরা পুরাভি না হোভে…’, এই গানের সুরে-কথায় গত কয়েক মাস ধরেই বুঁদ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। ইনস্টাগ্রাম রিল থেকে ফেসবুক ভিডিয়ো- সর্বত্রই এই গান নিয়ে মাতামাতি। পাকিস্তানের কোক স্টুডিয়োর গান এটি। নাম ‘পাসুরি’, গেয়েছেন সীমান্ত পারের দুই অত্যন্ত প্রতিভাবনা গায়ক আলি শেঠি এবং শায় গিল। পাকিস্তানের ‘কোক স্টুডিয়ো’র ১৪তম সিজনের এই গান সবচেয়ে বেশি শুনেছে ভারতীয়রাই। এই গানের সুবাদে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন আলি শেঠি। এবার তাঁর মুকুটে জুড়ল নয়া পালক।
টাইম-এর সেরা ১০০ উদীয়মান তারকার (Time Magazine’s list of emerging leaders) তালিকায় জায়গা করে নিলেন আলি শেঠি। ভারত থেকে এই তালিকায় ঠাঁই হয়েছে একমাত্র রিলায়েন্স জিও-র চেয়ারম্যান আকাশ অম্বানির। আর এই তালিকায় আকাশ অম্বানির সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন সরহদ পারের সঙ্গীতশিল্পী। আলির এই সাফল্যে হতবাক অনেকেই।
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতির জেরে ভারত-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের বন্ধনও বেশ আলগা হয়েছে গত কয়েক বছরে। পুলওয়ামা হামলার পর বলিউডে কাজ বন্ধ হয়েছে আতিফ আসলাম, রাহাত ফতে আলি খানদের। তা সত্ত্বেও ‘পাসুরি’ সুরে জাদুতে বুঁদ গোটা ইন্ডিয়া। ইউটিউবে এই গানের ভিউ সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি। প্রথম পাকিস্তানি গান হিসাবে স্পটিফাই-এর ‘ভাইরাল ৫০’-এ জাগয়া করে নিয়েছে ‘পাসুরি’।
টাইমসের তরফে জানানো হয়েছে, ‘শেঠির সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হল তিনি স্থানীয় সঙ্গীতের ব্যবহারটা জানেন, শাস্ত্রীয় রাগে তিনি সুপটু- সেই গুণ দিয়েই সব লিঙ্গ, ভাষার মানুষদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পাসুরি হল একটা অসাধারণ উদাহরণ যে শিল্পীরা কেমন করে অতিসূক্ষ্ম উপায়ে কর্তৃত্ববাদ এবং অসহিষ্ণুতা বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে পারে’।
আসলে পাক সুরের জাদুতে বরাবরই বাঁধা পড়েছে ভারতীয়রা। গুলাম আলি খান, নুসরত ফতে আলি খান থেকে হালফিলে আতিফ আসলাম,আলি জাফরদের না হলে এ ভাবে কী করে নিজের করে নেন ভারতীয়রা?
রাজনৈতিক বাতাবরণ যাই হোক না কেন নেটমাধ্যমের কল্য়াণে সুরের জাদু আটকবে এমন সাধ্যি কার? তাই তো ‘পাসুরি’ লাইন অফ কন্ট্রোল অতিক্রম করতে বেশি সময় নেয়নি।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলি শেঠি। দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্গীত চর্চায় মগ্ন। পাকিস্তানের ফিল্ম থেকে ড্রামা, সবেতেই হিট আলির মিউজিক। শুধু সঙ্গীত সাধনা নয়, লেখনির উপরও দক্ষতা রয়েছে আলির। তাঁর লেখা প্রথম বই ‘দ্য উইশ মেকার’ (২০০৯) সাড়া ফেলেছিল পাকিস্তানে। তাঁর গানে,তাঁর লেখেনিতে শিকড়ের টান আছে, সেটাই আলি শেঠির সবচেয়ে বড় ইউএসপি।