গত ২রা নভেম্বর দ্বিতীয়বার বাবা হয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। বিধায়কের তৃতীয় স্ত্রী, শ্রীময়ী চট্টরাজ শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে কন্যা সন্তান, কৃষভির জন্ম দেন। মা হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে তারকা দম্পতি। আইনি বিয়ের মাত্র সাড়ে ৮ মাসেই সন্তান প্রসব করে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন শ্রীময়ী। কিন্তু সেইসব বিতর্ককে ছাপিয়ে গেল শ্রীময়ী-কাঞ্চন কন্যার জন্মের বিল-বিতর্ক। আরও পড়ুন-ছেলের রিসেপশনে প্রয়াত ‘বন্ধু’ জাকিরকে শ্রদ্ধার্ঘ্য,‘প্রচার পেতে নয়’ বলছেন পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী
লাগে টাকা দেবে ‘গৌরী সেন’-এর, এ যেন লাগে টাকা দেবে ‘মমতা-সরকার’! কাঞ্চন কন্যা কৃষভির জন্মের বিল ৬ লক্ষ টাকা। সেই বিল নাকি কাঞ্চন বিধানসভায় জমা দিয়েছেন, এমনটাই খবর রটে মঙ্গলবার। পার্কস্ট্রিট এলাকার অভিজাত বলা যায়, শহরের সবচেয়ে দামী চাইল্ড অ্যান্ড ওমেন কেয়ার সেন্টার ভাগীরথী নেওটিয়া-তে ভর্তি ছিলেন শ্রীময়ী। সেই হাসপাতালে কৃষভির জন্মের মোট বিল ৬ লাখ! ২ লাখ টাকা বিল করেছে হাসপাতাল, ওদিকে শ্রীময়ীর চিকিৎসক ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত ও তাঁর টিমের বিল নাকি ৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ হাসপাতালের খরচের দ্বিগুণ। এই নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া।
বিতর্কের মুখে পড়তেই কাঞ্চনের সাফাই তিনি বিল জমা দেননি! টিভি নাইন বাংলাকে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘আমি কোনও বিল জমাই দিইনি। আমি যদি বিল জমা দিই সেই বিল তো আমার কাছে রয়েছে। আমরা বিধায়ক হিসাবে একটা মেডিকেল পাই। সেই হিসাবে আমি বিল জমা দেব। কিন্তু সেই বিলটা কত সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়’।
জনতার করের টাকায় বিধায়ক-কন্যার লক্ষ লক্ষ টাকার বিল মেটানো নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। টাকার অঙ্ক কাঞ্চন না ভাঙলেও সবটা ফাঁস করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কাঞ্চনের সমর্থনে মুখ খুলে তিনি বলেন, কাঞ্চন মল্লিক বাস্তবেই বিল এখনও বিধানসভায় জমা দেননি। ফেসবুক পোস্টে কুণালবাবু লেখেন, ‘কাঞ্চন মল্লিক তাঁর সন্তান হওয়ার বিষয়ে বিধানসভায় মেডিকেল বিল জমা দিয়েছেন বলে ট্রোলিং চলছে। এটা আপত্তিকর। কাঞ্চন কোনো বিল জমা দেননি। কাঞ্চন জনপ্রিয় মুখ। আরও নানা কারণে সম্প্রতি খবরে। সোশ্যাল মিডিয়াতে চর্চার কেন্দ্র। কিন্তু তাই বলে ঘটনা না জেনেবুঝে তাঁকে আক্রমণ, কটাক্ষ চলতে পারে না’।
কুণাল ঘোষ আরও জানান, 'বিধায়করা বিধানসভা থেকে মেডিকেল বিল পান। এটা নিয়ম বহির্ভূত নয়। কাঞ্চন শ্রীময়ীর সন্তানের জন্য ভাগীরথী নেওটিয়া দুলক্ষ টাকা বিল করেছে। ডাঃ প্রণব দাশগুপ্তর টিমের বিল চার লক্ষ টাকা। এই ছ-লক্ষ টাকার বিল নিয়ে কাঞ্চন বিধানসভায় খোঁজ নিয়েছেন উনি জমা দিতে পারেন কিনা। আলোচনা করেছেন। নিয়ম জেনেছেন। কিন্তু বিল জমা দেননি, আবার বলছি, বিল জমা দেননি। তার আগেই তিনি বিল জমা দিয়েছেন বলে সমালোচনা শুরু।
এখানে দুটো কথা। এক, যদি ডাক্তারবাবুদের বিল বেশি হয়, তাহলে কাঞ্চন বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করবেন? বিধানসভায় এসংক্রান্ত কোনো নিয়ম আছে কি না। দুই, এর আগে ওই হাসপাতাল এবং ওই ডাক্তারটিমের ক্ষেত্রে যদি কোনো বিল জমা পড়ে থাকে, তাহলে বিধানসভা কী করেছিল?
আমার বক্তব্য, আচমকা অত বেশি টাকার বিল পেয়ে বিধায়ক কাঞ্চন যদি বিধানসভায় খোঁজ নিয়ে থাকেন, দোষের নয়। জমা দিলেও দোষ হত না। বিধানসভা স্ক্রুটিনি করতে পারত। নিয়মনীতি অনুযায়ী চলত। কিন্তু কাঞ্চন বিল জমা দেননি, তাতেই এই খবর এবং কাঞ্চনকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা অনুচিত। কেন মেডিকেল বিল এত বেশি হবে, আলোচনাটা সেদিকে হওয়াটা জরুরি'।
এই পোস্টের জেরে বিতর্কের মুখে কুণাল ঘোষও। এক নেটিজেন লেখেন, ‘ডাক্তারদের কাছ থেকে কাটমানি খাওয়ার স্কীমটা অবিলম্বে চালু করুন দাদা, কম করে পঁচিশ পার্সেন্ট!’ আরেকজন লেখেন, ‘সরকারি হাসপিটাল তো ফ্রী হয়ে থাকে। শুধু শুধু মানুষের ৬ লাখ টাকা নষ্ট হল৷’