জগন্নাথের রথের রশিতে টান পড়েছে। আর রথের দিন কাটলেই দুর্গাপুজোর বাদ্যি বেজে যায়। আর প্রতিবছরই নিয়ম মেনে রথের দিনই টেলি অভিনেত্রী ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে দুর্গাপুজোর কাঠামো পুজো হয়। ত্বরিতার দেশের বাড়ির দুর্গাপুজো ৩৫০ বছরের পুরনো। আর এবার নিজের দেশের বাড়ির কাঠামো পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন ত্বরিতা। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন ত্বরিতার অভিনেতা স্বামী সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃৎশিল্পীর সঙ্গে মিলে সেই কাঠামোতে মাটি দেন সৌরভও।
কিন্তু ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়ের এই গ্রামের বাড়িটি কোথায়?
হুগলির কামারপুকুরের তাজপুরে রয়েছে ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়ের এই গ্রামের বাড়ি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, যেখানে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পৈতৃক ভিটে, সেই গ্রামের থেকে ১০ মিনিট দূরত্বে অবস্থিত তাজপুর গ্রামের মেয়ে ত্বরিতা। তাঁর সেই বাড়িতে দুর্গাপুজোর ইতিহাস ৩৫০ বছরের পুরনো। এবার স্ত্রী ত্বরিতার বাড়ির কাঠামোপুজোর কিছু ঝলক লেন্সবন্দি করেছেন সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই কিছু ঝলক ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন সৌরভ। যে ভিডিয়োর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দ্দিনীর স্তোত্রপাঠ।
ভিডিয়োতে সেখানে দেখা ত্বরিতার বাড়ির ঠাকুর দালান। সেখানেই আয়োজন করা হয়েছিল কাঠামোপুজোর। ঠাকুরদালানের সামনে ফলকে লেখা ত্বরিতার দাদু বগলাপতি চট্টোপাধ্যায়, বাবা রমাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দুই মেয়ে রিলিনা ও ত্বরিতার নাম।
নিজে ভিডিয়ো করে সেই গ্রামের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখেন ত্বরিতা। অভিনেত্রী জানান, এটাই তাঁর দাদুর পৈত্রিক ভিটে। তাঁর দাদু ছিলেন গ্রামের জমিদার। পরবর্তীকালে তিনি ব্যবসাসূত্রে কলকাতায় চলে যান। ত্বরিতার বাবা ও তাঁর জন্ম অবশ্য কলকাতাতেই।ত্বরিতার বাড়ির পাশেই রয়েছে সবুজে ঘেরা পুকুর, সেখানে রয়েছে আম-জাম-কাঁঠাল গাছ। সেই পুকুরের মাটি নিয়েই ত্বরিতার বাড়ির দুর্গাপ্রতিমার কাঠামোর মাটি দিলেন সৌরভ। সেসময় তাঁর পরনে ছিল পট্টবস্ত্র। ত্বরিতা জানান, যেটা পরে সৌরভ নিজের বাড়ির নারায়ণ আনতে যায়, সেই বস্ত্রই ও আজ পরেছে। প্রথমবার ও মাটি দেবে, তাই ও খুব উৎসাহী।
ত্বরিতা সেই গ্রামের বাড়িতে দেখা যায় বাড়ির উঠোন, পুরনো রান্না ঘর, মাটির উনুন। বাড়ির উঠোনে লাগানো শিউলি গাছ। ত্বরিতার মাকে পুজোর ব্যস্ততায় এদিক ওদিন ঘোরঘুরি করতে দেখা গেল। বাড়ির পুরোহিত, যিনি কিনা ত্বরিতারই বয়সী, নাম ফটিক, তাঁর সঙ্গেও আলাপ করান অভিনেত্রী। পরিচয় করান বাড়ির অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গেও। গোটা ভিডিয়োতে খালি পায়েই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ত্বরিতাকে। তিনি যেমন ঠিক যেমন আগে ছিল, এখনও সেভাবেই বাড়িটাকে রাখা হয়েছে, মূল কাঠামোর কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।
ত্বরিতা জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ির দুর্গা কাঠামো কখনও বিসর্জন দেওয়া হয় না। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে একই কাঠামোয় মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরি করা হয়। ত্বরিতার বাড়ির এক কর্মী ‘কিশোরদা’, তাঁকেই পুকুরে নেমে ঈশান কোণ থেকে মাটি তুলে আনেন, সেই মাটিই দুর্গা প্রতিমার কাঠামোর লাগানো হবে। ত্বরিতা যখন পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ভিডিয়ো করছিলেন, ঠিক তখন সামনে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে সৌরভকেও চামর হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর পুকুর থেকে তুলে আনা মাটি দুর্গা প্রতিমার গায়ে লেপা হয়। সৌরভও তাতে হাত লাগান। সবশেষে ত্বরিতা কথা দেন, তিনি পুজোর সময়ও তাঁর বাড়ির পুজো ঘুরিয়ে দেখাবেন।