সোমবার থেকে স্টার জলসায় শুরু হল ‘গৃহপ্রবেশ’। আর এই মেগার সঙ্গেই লম্বা বিরতির পর ছোটপর্দায় ফিরলেন সবার প্রিয় ‘বকুল’ মানে অভিনেত্রী ঊষসী রায়। নতুন সিরিয়াল থেকে ব্যক্তিগত জীবন, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ঊষসী রায়।
ছোটপর্দায় ফিরতে চার সময় কেন লাগল?
ঊষসীঃ আমার শেষ প্রোজেক্ট ছিল কাদম্বিনী। সেইসময় আবার বড্ড একঘেঁয়েমি লাগছিল। সেই একই গল্প, একই জায়গা, একই রুটিন, বড্ড মোনোটোনাস লাগছিল। মনে হয়েছিল নিজেকে অন্যান্য চরিত্রে এক্সপ্লোর করা উচিত। সেইজন্যই (টিভি থেকে) ব্রেক নিয়েছিলাম। গত চার বছরে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে, ওখানে কাজ করে মনে হল ব্যাপারটা নদীর এপার-ওপারের মতো। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এবার পুরোনো জীবনটাতে ফেরা যায়। কারণ ওয়েব সিরিজের কাজ খুব বেশি হলে ১০-১৫ দিনের। বাকি সময়টা তো বসে থাকতে হচ্ছে।
আমি চরিত্রের ক্ষেত্রে খুব চুজি, তাই ১২ মাসে ১২টা কাজ তো করছি না। সেক্ষেত্রে বাড়ি বসে থাকাটাই বেশি হয়ে যাচ্ছিল। অভিনয়টাকে আমি ভালোবেসে করি, বেশিরভাগ সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোটা মিস করছিলাম। তাই ধারাবাহিকে ফেরা। আমার কাছে গৃহপ্রবেশের আগেও অনেক ধারাবাহিকের অফার এসেছিল, কিন্তু তখন ফিরিয়ে দিই। পরে বুঝলাম, আমি তো শেষমেশ ক্যামেরার সামনেই বেশিরভাগ সময়টা কাটাতে চাই। তাছাড়া ফ্যানেরাও চাইছিল আমাকে ছোটপর্দায় দেখতে, নির্মাতারাও বলছিলেন। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। হ্যাঁ বলার পর, গল্পটা কী নিয়ে তাও শোনার সময় হয়নি। সোজা লুক সেটে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
বাংলা সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের থেকে সিরিয়ালে তো পারিশ্রমিকটা অনেক বেশি, সেই ভাবনাটাও কি কাজ করেনি?
ঊষসীঃ এটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। আমি অভিনয়টা ভালোবেসে করলেও টাকার অঙ্কটা তো গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ালে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যায়, সেটা বাইরে (ওটিটি বা ছবি) কাজ করে পাওয়া যায় না। সিরিয়ালে কাজ করাটা সরকারি চাকরির মতো। এটা সেফ জায়গা। হয়ত সবার পরিস্থিতি আমার মতো হয় না, কিন্তু ধারাবাহিকে আর্থিক সিকিউরিটি অনেক বেশি। আমরা যদি নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং খুব বাড়িয়ে না ফেলি, তাহলে সিরিয়াল খুব নির্ভরযোগ্য জায়গা।
সিরিয়াল থেকে ওটিটি-তে গিয়ে নায়িকারা ইমেজ ভাঙে। তা সবসময় ফ্যানেরা পছন্দ করে না। ট্রোলিংও ধেয়ে আসে। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে?
ঊষসীঃ আমার ক্ষেত্রে উলটো হয়েছে। আমি এমন সব চরিত্র ওয়েব সিরিজে পেয়েছি, যা ছোটপর্দায় করিনি। তাই খুব মজা করে সেই কাজগুলো করেছি। আমি কিন্তু ওটিটি-তে কাজ করেও নির্মাতাদের ভরসা জিততে পেরেছি। সেটা ভালো লাগার জায়গা। ফ্য়ানেরা সবসময়ই আমাকে সাপোর্ট করেছে। আর ওটিটি-তে আমার সিরিয়ালের অভিজ্ঞতা কাজে এসেছে।
গৃহপ্রবেশের শুভলক্ষ্মীকে নিয়ে কী বলবে? ঊষসীর সঙ্গে কতটা মিল খুুঁজে পেলে?
ঊষসীঃ শুভলক্ষ্মীর সঙ্গে ঊষসীর প্রচুর মিল রয়েছে। আমার দেশের বাড়ি, মামার বাড়ি সবই নদিয়া। তাই আমি শুনেই প্রচণ্ড এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিলাম, যখন জানতে পারি নদিয়ার মেয়ের নিউ ইয়র্ক যাওয়ার গল্প উঠে আসবে ধারাবাহিকে। বাকি মিলগুলো এখন আমি বলতে পারব না, সেটা দর্শক ধীরে ধীরে পর্দায় দেখবে। এখনও পর্যন্ত আমরা প্রোমো থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি, কেমনভাবে বিদেশের প্রেক্ষাপটে সিরিয়ালটা দেখানো হবে সেটা নিয়ে লোকের মনে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
বাকি শুভলক্ষ্মী একদম আজকাল মেয়েরা যেমন হয়, তেমনই। খুব সাধারণ একটা মেয়ে। প্রত্যেকটা মেয়ে ওর সঙ্গে কানেক্ট করতে পারবে।
শুভলক্ষ্মী বিদেশে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, আপনার এমন কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা আছে বিদেশযাত্রার?
ঊষসীঃ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ১০ দিনের ছুটিতে আমি বিদেশে গিয়েছিলাম। এবং যেদিন আমি ফিরব, পরদিনই আমাকে শ্যুটিং সেটে যেতে হবে এমনই পরিস্থিতি ছিল। না হলে আমি যে সিরিয়াল সেইসময় করতাম (কাদম্বিনী) তার টেলিকাস্ট বন্ধ হয়ে যাবে। কায়রো (মিশর) বিমানবন্দর থেকে আমার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছিল ভারতে ফেরার, কিন্তু কায়রো পৌঁছাতে আমাকে আরও তিনটে ডোমেস্টিক ফ্লাইট ধরতে হত। এবার প্রথম ফ্লাইটটা ধরতে গিয়েই শুনলাম, তা বাতিল হয়েছে। আমার তো মাথায় হাত! অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক টাকা খরচ করে অবশেষে দেড়দিন পর আমি শ্যুটিং ফ্লোরে এসে পৌঁছাই। শুভলক্ষ্মীর ক্রাইসিসটা অন্য, আমারটা অন্যরকম ছিল। ২০২০-র শুরুটা আমার এইরকম ঘটেছিল। তখনই মনে হয়েছিল এই বছরটা বাজে কাটবে! তারপর তো করোনা চলে এল…
সুস্মিত তো ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার চেয়ে কম অভিজ্ঞ, ওর সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে?
ঊষসীঃ খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে কাজ। অনেকদিন বাদে আমি সিরিয়ালে ফিরছি, সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলার ব্যাপারে একটু টেনশনে ছিলাম। কিন্তু সবটা খুব স্মুথলি এগোচ্ছে। কোনও অসুবিধায় হয়নি। ওর সঙ্গে কাজ করে বেশ মজা লাগছে।
প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী কী টিপস দিলেন?
ঊষসীঃ রাজদার সঙ্গে গত বছর একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল। রাজদা আমাকে বলেছিল, ছোটলোকে আমার কাজ খুব ভালো লেগেছে। তার ঠিক এক বছরের মাথায় ওঁনার প্রোডাকশনে কাজ করছি। রাজদাকে বললাম, তখনই মনে হয়েছিল তোমার সঙ্গে কাজ করব। তবে এইভাবে সুযোগ আসবে ভাবিনি।
এখনও টেলিপাড়ার অনেক নায়িকাই মুম্বইয়ে যাচ্ছেন। হিন্দি মেগাতে কাজ করছেন, আপনার কাছে এমন অফার আসেনি?
ঊষসীঃ তখন সদ্য বকুল কথা শেষ করেছি, সেই সময় থেকেই প্রচুর হিন্দি সিরিয়ালের অফার এসেছিল আমার কাছে। তবে আমি সেগুলো জাহির করি না বা বলতে পছন্দ করি না। সেই প্রোজেক্টগুলো আমাকে উত্তেজিত করেনি। যদি ওয়েব সিরিজ বা ছবির অফার আসে মুম্বই থেকে, তাহলে নিশ্চই ভেবে দেখব। কিন্তু যদি সিরিয়ালই করার হয়, তাহলে আমি কলকাতা ছেড়ে কেন যাব? ভবিষ্যতের কথা তো কেউ বলতে পারে না। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে মুম্বই গিয়ে আমি থাকতে পারব না। কারণ আমি খুব ঘরকুণো। হয়ত বাবা-মা শুনলে চমকে যাবে, কিন্তু আমি বাবা-মার সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। ওঁদের ছেড়ে অন্য শহরে থাকব, এটা আমি ভাবতেও পারি না।
আজকাল সিরিয়ালের মেয়াদ ২-৩ মাস! সেটা কি আপনাকে ভাবায় শিল্পী হিসাবে?
ঊষসীঃ আমরা যা ভাবব সেটাই হবে এমনটা নয়। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, চাপ নিয়ে লাভ নেই। কাজটাকে ভালোবেসে করা উচিত। আমি নিজের কাজটা নিয়ে প্যাশানেট, টিআরপি নিয়ে আমি ভাবি না। নিজের অভিনয়টা এনজয় করে আমি শট দিয়ে যাবে। টিআরপি কত আসবে সেটা নির্মাতারা ভাবুন। ওটা আমার মাথাব্যাথা নয়, শুভলক্ষ্মীকে দেখে যেন সবাই ভালো বলে।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঊষসী বরাবরই মুখচোরা, কেন?
ঊষসীঃ আমার মনে হয়, ব্য়ক্তিগত জীবনটা ব্যক্তিগত রাখাই উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কিছুই পার্সোনাল থাকে না। কিন্তু যেটুকু জানানোর দরকার, তার বাইরে আমার পরিবার,কিংবা যাঁকে নিয়ে সবার কৌতুহল সেটা আমি ব্যক্তিগতই রাখি। বাই চয়েজ আমি সবটা ব্যক্তিগত রাখতে ভালোবাসি।
তাহলে ঊষসীর জীবনে বিশেষ কেউ আছে? আপনি তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আগে?
ঊষসীঃ হিট অফ দ্য মোমেন্ট আমরা তো অনেক কথাই বলি। চাপের মুখে পড়ে হয়ত কোনও সময় কিছু বলে দিয়েছি, তার মানে সবটা সত্যি নয়। (হাসি) আমি ১০০% সিঙ্গল। তবে আমি প্রেমিক মানুষ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার আমি যখন সম্পর্কে জড়াতে চাই না, আমার জীবনে একটা করে প্রেম চলে আসে। আমি কিন্তু খুব রোম্যান্টিক। প্রেম থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। আমার জীবনের মন্ত্রা, চুটিয়ে প্রেম কর, তবে প্রেম জীবনকে ব্যক্তিগত রাখো।