নক্ষত্রপতন বলিউডে। চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সুলোচনা লাটকর। হিন্দির পাশাপাশি মরাঠি চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান ভোলবার নয়। রবিবার মুম্বইয়ের দাদরের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুলোচনা। বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর কন্যা কাঞ্চনা ঘানেকর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অভিনেত্রীর মেয়ে জানান শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরিবারের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমার ঠাকুমা শ্রীমতী সুলোচনা লাটকর, জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেত্রী দীর্ঘ রোগভোগের পর আজ প্রয়াত হয়েছেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি’। জানানো হয়েছে সোমবার দাদরের বাড়িতে অন্তিম দর্শনের জন্য শায়িত রাখা হবে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর দেহ, আগামিকাল শিবাজি পার্ক মহাশ্মশানে হবে শেষকৃত্য়।
১৯২৮ সালের ৩০শে জুলাই বোম্বাইতে জন্মগ্রহণ করে সুলোচনা। অল্প বয়সেই প্লেগ মহামারীর শিকার হয়ে মারা যান তাঁর বাবা-মা। বাবার বন্ধুর বাড়িতে আশ্রিতা হিসাবে বড় হওয়া সুলোচনা কাজ পেয়েছিলেন প্রফুল্ল পিকচার্সে। সেখানেই লতা মঙ্গেকশরের সঙ্গে আলাপ তাঁর। চারের দশকের গোড়ায় তৈরি সেই বন্ধুত্ব টিকে ছিল আজীবন। ১৯৪৪ সালে ‘মরাঠি করনা’ নামক মরাঠি ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি তাঁর। এরপর ‘জীবন শাখা’, ‘বাল্মিকী’র মতো হিট মরাঠি ছবিতে লিড চরিত্রে কাজ করেছেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন সুলোচনা, বিয়ের পরেও চলচ্চিত্রে কাজ চালিয়ে যান সমানতালে।
ভারত ভূষণের সঙ্গে জুটি বেঁধে হিন্দি ছবি ‘অউরত তেরি ইহি কাহানি’তে অভিনয় করেন সুলোচনা। এরপর পঞ্চাশের দশকে ‘মহাত্মা কবীর’, 'সজনি', ‘সতী অনুসূয়া’, ‘অব দিল্লি দূর নেহি’র মতো ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তিশের কোঠায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের অফার আসতে থাকে তাঁর কাছে। শুরুতে কুন্ঠাবোধ করলেও পরবর্তী তিন দশক ধরে বিমল রায়, দেবানন্দ, সুনীল দত্ত, রাজেশ খান্না থেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো সুপারস্টারদের মায়ের চরিত্রে রুপোলি পর্দায় নজর কেড়েছেন সুলোচনা লাটকর।
১৯৯৯ সালে ভারত সরকার তাঁর ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করেন। ২০০৪ সালে ফিল্মফেয়ারের তরফে আজীবন কৃতি সম্মান প্রদান করা হয় সুলোচনা লাটকরকে। প্রায় সাত দশক ব্যাপী ফিল্মি কেরিয়ারে ৩০০-র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রয়াত অভিনেত্রী। শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছে সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবিতে। তাঁর প্রয়াণে অভিভাবক-হীন বলিউড।