না ফেরার দেশে গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বহুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন জনপ্রিয় এই গায়ক। কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শনিবার সকালে মৃত্যু হয় বর্ষীয়ান এই শিল্পীর মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
জানা যাচ্ছে অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রবীণ শিল্পী। গত সোমবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় ITU-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। অবশেষে শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতালে বর্ষীয়ান গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন তাঁকে দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন শিল্পী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তবে তখনও তাঁর অবস্থা সংকটজনকই ছিল। শেষরক্ষা হল না, শনিবার না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২এর ২৫ জুন, অবিভক্ত বাংলার বরিশালে। তাঁর বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। তাঁর মা বাণী মুখোপাধ্যায় প্রতুলকে নিয়ে দেশভাগের পরে এপার বাংলায় চলে আসেন। এখানে তাঁরা থাকতেন চুঁচুড়ায়। অনেক কম বয়স থেকেই কবিতায় সুর দিয়ে গান বানাতেন তিনি। কবি মঙ্গলচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় সুর দেন। এছাড়া নিজেও গান লিখতেন। যদিও নিয়ম মেনে তিনি কোনওদিনই গান শেখেননি। তিনি তাঁর নিজের আবেগকেই সুর ও কথার জালে বেঁধে ফেলতে পারতেন। তাঁর অনবদ্য ও চিরন্তন সৃষ্টি 'আমি বাংলার গান গাই' ‘ডিঙ্গা ভাষা সাগরে’।
তাঁর জীবনের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ১৯৮৮তে। সেটা হল ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’। যদিও এটা তাঁর একক অ্যালবাম নয়। তখন অন্য শিল্পীদের সঙ্গে মিলে কাজ করেছিলেন। প্রতুলের প্রথম একক অ্যালবাম বের হয় ১৯৯৪ সালে ‘যেতে হবে’। আর তাঁর শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)।
এছাড়াও তাঁর অন্যান্য অ্যালবামগুলি হল ‘চক্র চাঁদ জোওয়ান চাঁদ বর্ণনা সহ’, ‘লাল কমলা হলদে সবুজ’, ‘দারুন গভীর থেকে’, ‘বর্ণনার সাথে গিয়েছিলাম লোহার ঘৃণা’, ‘কি আমদের জাত’, ‘ভালোবাসার মানুষ’, ‘কাঁচের বাসনের ঘ্যান ঘ্যান শব্দে’, ‘মা সেলাই করে’, ‘সেয়ে ছোটো দুতি পা’, ‘আমার ধান কাটার গান গাই’, ‘নাকোসি স্কেলে আফ্রিকা’, ‘তুমি ছেঁড়া মাটির বুকে আছিস’, ‘কুট্টুস কোট্টাস’, ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখছিলাম’, ‘স্বপনপুরে’।
‘গোসাইবাগানের ভূত’ ছবিতে প্লেব্যাকও করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।