একসময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর উদ্যোগে বাংলায় দুর্গাপুজো ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদ প্রচারের জন্য স্বদেশীর প্রতীক হয়ে ওঠে। সিমলা ব্যায়াম সমিতি, বাগবাজার সার্বজনীন এবং আরও কয়েকটি অনুশীলন সমিতি বিপ্লবীদের আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। যারা একসময় সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে দুর্গাপুজোকে, লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে দেশপ্রেমের শিখা জ্বালানোর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
দেশের একাধিক জেলে থাকার সময় সেখানেই দুর্গাপুজো করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। দীর্ঘদিন ধরে পুজোর ছত্রছায়ায় বিপ্লবীদের জড়ো করার পরিকল্পনার জাল বুনেছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, দেশপ্রেমী তরুণদের ট্রেনিং দেওয়া এবং দলবদ্ধ করা। তরুণদের লাঠিখেলা, কুস্তি, ছুরিখেলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে অন্তরালে হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী গড়ার কাজ।
নেতাজির সংগ্রামকালের এমনই এক অধ্যায় নিয়ে তৈরি হয়েছে অবন্তী সিনহা পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ারশিপ’। তথ্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ২৮ মিনিট। এনএফডিসির উদ্যোগে ফিল্মস ডিভিশন প্রযোজিত এই তথ্যচিত্রটি প্রথমবার প্রদর্শিত হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ১৮ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় শিশির মঞ্চে এবং ২০ ডিসেম্বর দুপুর দুটোয় নন্দন-৩ এ প্রদর্শিত হবে এই তথ্যচিত্র।
এ বিষয় বিস্তারিত জানিয়ে তথ্যচিত্র পরিচালক অবন্তী সিনহা বলেছেন, ‘রিসার্চ শুরু করে দেখতে পাই দেশের একাধিক জেলে থাকার সময়ে সেখানেই দুর্গাপুজো করার উদ্যোগ নেন নেতাজী। এমন পুজোর ছত্রছায়ায় বিপ্লবীদের জড়ো করার পরিকল্পনা তাঁর মাথায় অনেক দিন ধরেই ছিল। ক্রমে তা পূর্ণাঙ্গ আকার নেয়। তাছাড়া স্পিরিচুয়ালিটির দিক দিয়ে দেখলে নেতাজি আগাগোড়াই স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত ছিলেন। স্বামীজীর চারিত্রিক দৃঢ়তা গঠন এবং দেশসেবার আদর্শ তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।'
দেশ স্বাধীন করার পাশাপাশি দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন নেতাজি। এই তথ্যচিত্রে সেই বিষয়গুলিও দেখানো হয়েছে। দেশের কাজে মহিলাদের যুক্ত করে তাঁদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে লুপ্তপ্রায় ছৌ নাচ ‘পরভা’ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। এরপর সিকিমের বৌদ্ধ জল সংরক্ষণ আচার বিষয়ক তথ্যচিত্র 'ভূমচু'-ও বানিয়েছেন। দুটি ছবিই দেশ-বিদেশের নানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ারশিপ’ তাঁর তৃতীয় তথ্যচিত্র।