৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। শুক্রবার তাঁর শেষযাত্রায় কাতারে কাতারে উপচে পড়ল ভিড়, অঝোরে কাঁদল শহর কলকাতা।
ব্যক্তিগত জীবনকে বরাবর ব্যক্তিগত রাখতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সাধারণ জীবনযাপনেই বিশ্বাসী ছিলেন বুদ্ধদেব ও তাঁর স্ত্রী। সেই কারণেই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাউ যাননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ঠিক এক বছর আগে চর্চায় উঠে এসেছিলেন বুদ্ধদেব-মীরা ভট্টাচার্যের একমাত্র সন্তান। জন্মসূত্রে মেয়ে হলেও ‘মানসিকভাবে পুরুষ', তাই সুচেতনা থেকে সুচতেন হওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন বুদ্ধ-কন্যা। এর জন্য কম ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হয়নি সুচেতনকে (এখন এই নামেই পরিচিত তিনি)। তাঁর নামের সঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম জড়িয়ে থাকাতেই আরও বেশি নীতি পুলিশির শিকার হয়েছেন।
কিন্তু থেমে থাকেননি সুচেতন। যবে থেকে জ্ঞান হয়েছে তবে থেকেই 'ট্রান্স-ম্যান' সুচেতন। এখন খাতায়-কলমেও সেই পরিচিতি মিলেছে। চলতি বছরের গোড়াতেই নিজের‘ট্রান্সজেন্ডার আইডেন্টিটি কার্ড’ পান সুচেতন। সেখানেও অভিভাবক হিসাবে নাম উল্লেখ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। সুচেতন ঘনিষ্ঠদের তরফে জানা যায়, সন্তানের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনওদিন আপত্তি জানানি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
‘লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাবা জানেন?’ বছর খানেক আগে বুদ্ধদেবের সন্তান সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, এই লড়াই তাঁর ব্যক্তিগত লড়াই। রাজনীতিতে কোনওদিনই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি সুচেতনকে। তবে কমিউনিস্ট ধ্যান-ধারণাতেই বিশ্বাসী তিনি। কমিউনিস্ট নেতার ‘মেয়ে’ হয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত, সমাজের বিরোধিতা প্রসঙ্গে কড়া ভাষায় সুচেতনা এবিপি আনন্দকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমার বাবা এবং আমি অত্যন্ত প্রগ্রেসিভ। কমিউনিস্ট শব্দটা যারা বোঝেন না, তাঁদের বোঝানো দরকার এর সঙ্গে (লিঙ্গ পরিবর্তনের) কমিউনিজমের কোনও সম্পর্ক নেই’। শুরু থেকেই সুচেতনের লড়াইয়ে পাশে ছিলেন বুদ্ধদেব। মা মীরা ভট্টাচার্য শুরুতে পুরোটা মানতে পারেননি, তবে ধাপে ধাপে সবটা গ্রহণ করেছেন।
সঙ্গী সুচন্দাকে নিয়ে সংসার সুচেতনের। ঢাকুরিয়ায় ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি, তবে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছিল নিয়মিত যাতায়াত। লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য যে সকল শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, সুচেতন তা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করে ফেলেছেন। তবুও হয়ত এখনও অনেকটা লড়াই বাকি সুচেতন এবং তাঁর মতো অসংখ্য রূপান্তরকামীর। সমাজের এই অংশের মানুষরা কখনওই সমাজের মূল স্রোত থেকে আলাদা নয়। এটা যাতে সব রাজনৈতিক দল উপলব্ধি করে, সে কথাই মাস খানেক আগে বলতে শোনা গিয়েছিল সুচেতনকে।