দেখতে দেখতে বাংলা গানের জগতে তিন দশক পার করে ফেলেছেন লোপামুদ্র মিত্র (Lopamudra Mitra)। ৩০ বছর ধরে বহু মানুষের অনুপ্রেরণা তিনি, দীর্ঘ সফরে বাংলা গানের ইন্ডাস্ট্রির অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছেন ‘ধাধিনা নাতিনা’ গায়িকা। বাংলা ইন্ডিপেনডেন্ট গানের জগতের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়, সেকথা বলে মাস কয়েক আগেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন লোপামুদ্রা। আজকাল টিকে থাকতে গেলে শুধু জুনিয়র নয়, সিনিয়র শিল্পীরাও অনেকটাই মাচা শো-এর উপর নির্ভরশীল। তবে সেই মাচা শো-এর অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর হয় না। একবার মাচা শো করতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন গায়িকা।
সম্প্রতি এক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা শেয়ার করে নিয়েছেন শিল্পী। লোপামুদ্রা জানান, আমডাঙায় শো ছিল তাঁর। পুলিশের এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে ডাক পড়েছিল। এক ঘন্টার অনুষ্ঠান। সেইমতো নিজের সমস্ত আইকনিক গানের প্লে-লিস্ট রেডি করেছিলেন তিনি। ‘আয় আয় কে যাবি’ থেকে ‘হৃদমাঝারে’, ‘ধাধিনা নাতিনা’-র মতো গান পরিবেশন করেন জয় সরকার ঘরণী। কিন্তু সেইসব গান গেয়ে যে ব্যবহার তিনি পেয়েছিলেন তা শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবেন।
লোপামুদ্রা জানান,'সুন্দরী কমলা গাইছি, ধাধিনা নাতিনা গাইছি, কিচ্ছু শুনছে না, বলেই চলেছে- এই স্টেজ থেকে নেমে যা। নাম আগে'। অসম্মানের শেষ এখানেই নয়, গায়িকা দেখেন নির্দ্বিধায় দর্শকাসনের সামনের সারিতে বসে এক ব্যক্তি বিড়ি খাচ্ছে। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলে লোপামুদ্রা বলে উঠেন,‘অ্যাই বিড়ি খাচ্ছিস কেন?’ এই সব মানুষকে সরাসরি তুই-ই বলতে হয়। বললাম, ‘খা বিড়ি। বাড়িতে বোন আছে, মা আছে? তুই মরে গেলে আর কার কী এসে যায় বল?' প্রচণ্ড বিরক্তি সত্ত্বেও পেশাদারিত্বের কথা মাথায় রেখে গান চালিয়ে যান তিনি। শেষে ফুঁসে ওঠে বলেন, ‘এই শোন আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে এক ঘণ্টা গান গাওয়ার জন্য। এক ঘণ্টার আগে যদি কেউ আমাকে স্টেজ থেকে নামাতে পারে, নামিয়ে দেখাক।’
এরপর আর কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস দেখায়নি। নিজের মতো করে গানের অনুষ্ঠান শেষ করেন তিনি। এই ভিডিয়ো ফেসবুকে ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে চর্চা। এক ব্যক্তি লেখেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলাম আমিও। কিন্তু যা পরিবেশ ছিল আর যেভাবে তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছিল। আমি ভুলিনি। জঘন্য’। মাচা শো-তে বাংলার শিল্পীদের ডাক দিলেও বাংলা গান শুনতে অনীহা প্রকাশ করেন অনেক দর্শকই। এর আগে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন অনেক শিল্পী। কড়া ভাষায় ধমকও দিতে দেখা গেছে নচিকেতা, ইমনদের। গত বছরই ইমনের এক শো-তে ‘লায়লা’ গান গাইবার ‘আবদার’ এসেছিল। বকুনি নিয়ে গায়িকা বলেছিলেন, ‘লায়লা আবার কে ভাই? বাংলা গান শুনতে ইচ্ছে করছে না? তাহলে বাড়ি চলে যাও। বাংলা গানে নাচতে ইচ্ছে না করলে পাতলি গলি সে নিকল যাও’।