বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ প্রিয়াঙ্কা রতি পাল। এখন অবশ্য টলিগঞ্জের গণ্ডি পেরিয়ে মায়ানগরীতে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে অভিনেত্রী। স্কুলজীবন থেকেই পেশাদার মডেল হিসাবে কাজ শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা। এরপর টেলিফিল্মের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি। ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’-র বাঈজি ময়নাসুন্দরী, কখনও ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর জমিদারগিন্নি হিসাবে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
একবার দিদি নম্বর ১-এর মঞ্চে এসে নিজের জন্মদাত্রী মায়ের নামে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। রচনার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ১০ বছর আগে শীতের রাতে এক কাপড়ে মা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাঁকে এবং তাঁর ছ'টি পোষ্য কুকুরকে। এরপর থেকে প্রিয়াঙ্কার একমাত্র আশ্রয় তাঁর মামিমা।
ক্লাস এইটে পড়তে বাবাকে হারান প্রিয়াঙ্কা। এরপর চারবছর সংসার চালাতে মা অনেক কষ্ট করেছেন মেনে নেন অভিনেত্রী। টুয়েলভে পড়তেই সংসারের হাল ধরেন প্রিয়াঙ্কা। মা ও বোনের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তবুও সংসারের নিত্য অশান্তির মাঝে এক শীতের রাতে মা বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল তাঁকে। এই কথা শুনে হাঁ রচনা। বলেই বসেন, ‘এটা আবার হয় নাকি?’
বোন পড়াশোনা করে মানুষ হোক চেয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। অথচ বোনের মন ছিল না লেখাপড়ায়, অন্যদিকে কাজও করতে রাজি নয় সে। এই নিয়েই সংসারে ঝামেলা লাগত। ওই রাতে মা তাঁকে শুধু বাড়ি থেকে বের করে দেয়নি, আইনি পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিল মেয়ের বিরুদ্ধে। সেই কারণে আর ওই বাড়িতে ঢুকতে পারেননি প্রিয়াঙ্কা, নিজের কোনও জিনিসপত্রও নিতে পারেননি, অভিযোগ তাঁর।
কান্না চেপে অভিনেত্রী বলেন, ‘ওই রাতে আমাকে কেউ আশ্রয় দিলেও ৬টা কুকুরকে দিতো না। কিন্তু মামি যে ৬টা কুকুরকে শুধু রাখেনি, ওইদিন কথা দিয়েছিল আমি তোর দায়িত্ব নিলাম। আজ পর্যন্ত সেটা পালন করেছে। আমার সঙ্গে সবাই সহমত নাও হতে পারেন তবে শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। জন্ম তো পশুরাও দেয়। মা হওয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর জন্য সবসময় রক্তের সম্পর্ক থাকারও দরকার হয় না। এটা আমি নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছি’।
মা হয়ত রাগের মাথায় বার করে দিয়েছে, পরে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। আশা ছিল প্রিয়াঙ্কার, কিন্তু সমস্যা মেটেনি। এত বছর পরেও মা-কে একটাই কথা বলতে চান অভিনেত্রী। দিদি নম্বর ১-এর মঞ্চে দাঁড়িয়েই বলেন, ‘জীবনটা তো খুব ছোট….মায়ের তো বয়স হচ্ছে। শান্তিটা সবচেয়ে জরুরিস একটু যদি ইগোটা দূরে সরিয়ে রাখা যায় শান্তির জন্য। হয়ত জেদ বশত করেছে সবটা, এখন সবটা ভুলে যাওয়া উচিত’।
মামিমার একান্ত ইচ্ছে মনের মতো পাত্র দেখে বিয়ে করুক প্রিয়াঙ্কা। জীবনে এত সমস্যার মুখোমুখি হয়েও সংসারজীবন থেকে বীতশ্রদ্ধ নন অভিনেত্রী। মনের মতো পুরুষকে বিয়ে করতে চান প্রিয়াঙ্কা। মা-কে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তাঁর ঠিকানা মুম্বই, সেখানে অভিনয়ের পাশাপাশি একটি ক্লাউড কিচেনও চালান অভিনেত্রী।