কথায় আছে ভালোবাসা অন্ধ! সেই কথাই প্রমাণ করেছেন গায়ক রূপকুমার রাঠোর। বলিউডের সঙ্গীত জগতের পরিচিত নাম তিনি। অজস্র হিট গান উপহার দিয়েছেন ‘মওলা মেরে মওলা’ খ্যাত গায়ক। কিন্তু তার প্রেমের গল্প বলিউড সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানাবে।
রূপ কুমার রাঠোরের প্রেম কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে নাটকীয় রোমাঞ্চ। বলা যায়, নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প এটি। যা গুরু এবং শিষ্যের মধ্যে সম্পর্ককে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। রূপ কুমার রাঠোর তাঁর নিজের গুরু অনুপ জালোটার বউ সোনালি শেঠের প্রেমে পড়েন। সমাজের কটাক্ষ সত্ত্বেও নিজেদের সম্পর্ককে পূর্ণতা দিয়েছেন তাঁরা। যে প্রেমকাহিনি নিয়ে আজও আলোচনা কম হয় না।
রূপ কুমার রাঠোরের জন্ম হয়েছিল রাঠোর ঘরানায়, যা শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় ঘরানা। তাঁর পিতা পণ্ডিত চতুর্ভুজ রাঠোর ছিলেন ধ্রুপদ ঘরানার একজন বিখ্যাত গায়ক। রূপকুমার রাঠোরের রক্তেই সঙ্গীত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তবলাবাদক হিসাবে কেরিয়ার তৈরি করেছিলেন রূপকুমার। এই সময়ে, তিনি বিখ্যাত ভজন গায়ক অনুপ জালোটার সাথে যুক্ত ছিলেন, অনুপ জালোটার অনুষ্ঠানে তবলা বাজাতেন রূপকুমার রাঠোর। এই সময়েই সোনালি শেঠের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
অনুপ জালোটার তৎকালীন স্ত্রী সোনালি নিজেও একজন দুর্দান্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। রূপ কুমার এবং সোনালি যখন প্রথমবার দেখা করেন, তখন থেকেই পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হন। সংগীতে একে অপরের বোঝাপড়া এবং সমন্বয় দুজনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। আস্তে আস্তে এই সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুজনের সম্পর্ক গভীর হয়। তবে, সম্পর্কটি সহজ ছিল না কারণ সোনালি ইতিমধ্যে বিবাহিত ছিলেন এবং তার স্বামী অনুপ জালোটা সংগীত জগতের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
রূপ কুমার ও সোনালির সম্পর্কের খবর যখন গানের জগতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা নিয়ে বড়সড় বিতর্কের ঝড় ওঠে। শুধু প্রেমের গল্প নয়, গুরু-শিষ্যের সম্পর্কটাও কঠিন করে তুলেছিল এই সম্পর্ক। অনুপ জালোটা এবং সোনালির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এরপর রূপ কুমার ও সোনালি একে অপরের হাত ধরে ১৯৮০৯ সালে বিয়ে করেন। এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত ছিল কারণ সমাজ এবং সংগীত জগতের অনেকেরই এই বিয়েতে মত ছিল না। অনুপ জালোটা রূপকুমারকে বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। বিয়ের পর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হারাতে হয়েছিল গায়ককে। তবে নব্বইয়ের দশকে ধীরে ধীরে নিজের পরিচিত গড়ে তোলেন শিল্পী।
বিয়ের পর শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, গানের জগতেও দারুণ পারফর্ম করতে শুরু করেন রূপ কুমার ও সোনালি। দু'জন একসাথে অনেকগুলি লাইভ কনসার্ট করেছিলেন এবং তাদের যুগলবন্দি শ্রোতারা পছন্দ করতে থাকেন। ওদিকে প্লে-ব্যাকের দুনিয়ায় বর্ডার ছবির ‘সন্দেশে আতে হ্যায়’ গানটি রূপকুমারের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ইউটার্ন ছিল।