সদ্য প্রকাশিত হয়েছে বলি-অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার আত্মজীবনী 'সচ কহু তো'। সেখানে একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। নিজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের নানান দিক খুল্লাম খুল্লা ভাবে পাঠকদের কাছে পেশ করেছেন তিনি। অভিনেত্রীর জীবন হিসেবে নানান চড়াই উৎরাইয়ের ঘটনার পাশাপাশি বইয়ের একাধিক অধ্যায়ের সাদা পাতার কালো অক্ষরে ফুটে উঠেছে এই সমাজে একজন অবিবাহিত নারী হিসেবে এক সন্তানকে জন্ম দেওয়াটা কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
আটের দশকে কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ফলশ্রুতি হিসেবে জন্ম নিয়েছিল তাঁদের কন্যা সন্তান মাসাবা। কিন্তু নিজের স্ত্রীয়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না ভিভ। ফলে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল নীনার পক্ষে। তবু সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর কথা নিজেকে নিজেই দিয়েছিলেন এই বলি-অভিনেত্রী। তবে অন্তঃসত্বা অবস্থায় মানসিক চাপের সঙ্গে কেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে তা এই আত্মজীবনীতে লেখা একটি ঘটনা বললেই বোঝা যাবে।
নীনা লিখেছেন, তিনি যখন সন্তানসম্ভবা তখন বন্ধু সুজয় দত্ত তাঁর বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।পাছে নীনাকে লোকনিন্দার মুখোমুখি হতে হয়, সেই আশঙ্কায়। সেই ভেবে নীনার সঙ্গে এক ব্যক্তির বিয়ের ব্যবস্থাও তিনি প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। এরপর নীনাকে সেই ব্যক্তির কথা বলে সুজয় জানান নামি ব্যাঙ্কের এক উঁচু পদে থাকা ওই আধিকারিক আসলে সমকামী। সামাজিক লজ্জা ও নিন্দা থেকে বাঁচতে তিনি নীনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। নীনার গর্ভের সন্তান নিয়েও বিন্দুমাত্র কোনও অসুবিদা নেই তাঁর। নীনা স্বচ্ছন্দে ওই সন্তানের পিতৃপরিচয় হিসেবে ওই ব্যক্তির নাম বলতে পারবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি যে নীনা কিংবা তাঁর সন্তানের জীবনে জড়িয়ে থাকবেন না, সেকথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল তখনই।
সব শুনে টুনে হেসে ফেলেছিলেন নীনা। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন শুধুমাত্র কোনওরকম 'বিতর্ক' এড়াতে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নন। নিজের সন্তানের জন্য একজন মা যতটা করতে পারে তিনি ততটাই করবেন। ততদূরই যাবেন। এর জন্য তাঁর মনে কোনও ভয় কিংবা চিন্তা নেই। আর আপাতত যতদিন তাঁর শরীরে অন্তঃসত্বা হওয়ার সব চিহ্ন প্রকট হচ্ছে, ততদিন তিনি ঢোলা পোশাক পরে চালিয়ে দেবেন কাজ!
আত্মজীবনীর আরও এক জায়গায় নীনা জানিয়েছেন ওই অবস্থায় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা বলি-অভিনেতা,পরিচালক সতীশ কৌশিকও এগিয়ে এসেছিলেন। নীনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সতীশ জানিয়েছিলেন যদি নীনার সন্তানের গায়ের রং চাপা হয় তবে স্বচ্ছন্দে সেই সন্তানের বাবার নাম সতীশ বলে দিতে পারেন তিনি। সতীশ যেহেতু নিজেও চাপা রঙের অধিকারী তাই লোকজনের মনে সন্দেহের কোনও প্রশ্নই উঠবে না।