২৯ এপ্রিল ২০২০,ভারতীয় সিনেমার একটা কালো দিন। এদিনই সিনেমাকে অলবিদা জানিয়েছেন ইরফান। ক্যানসারের সঙ্গে দু বছরের লড়াইয়ে ইতি টেনে বিদায় নিয়েছেন কোনও এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। দেখতে দেখতে ইরফানহীন জীবনের গোটা একটা মাস কাটিয়ে ফেললেন তাঁর স্ত্রী,তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড, তাঁর সহপাঠী তথা সহকর্মী সুতপা শিকদার। শুক্রবার ইরফান খানের মৃত্যুর একমাস পূর্তির দিনই ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট করেন সুতপা।
ফেসবুকে স্বামীর সঙ্গে নিজের একটি ছবি এবং ইরফানের একটি সিঙ্গল ছবি পোস্ট করেন তিনি লেখেন, ‘ভালো কাজ, খারাপ কাজের বাইরে গিয়ে একটা ক্ষেত্র রয়েছে। তোমার সঙ্গে আমার সেখানে দেখা হবে। আত্মা একটা ঘাসে উপর শুয়ে থাকবে, এবং এই পৃথিবীটা এতটাই ভরে উঠবে যে এখানে আর কারোর সঙ্গে কথা বলার থাকবে না। এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা, দেখা হবে, কথা হবে। এখন শুধু অপেক্ষা, যতক্ষণ না আবারও দেখা হয়’।
ইরফানের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি আঁকড়েই পড়ে রয়েছে পরিবার ও অনুরাগীরা। প্রয়াত অভিনেতার একাধিক পুরোনো ভিডিয়ো,ছবি উঠে এসেছে তাঁর বড়ছেলে বাবিল খানের ইনস্টাগ্রামের দেওয়ালে। ইরফানের মৃত্যুর পর সুতপাও তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন, ' আমি কিচ্ছু হারাইনি, আমি সব দিক থেকে লাভ করেছি'। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে ঠিক যেমনভাবে সুতপা ইরফানকে আগলে রেখেছেন সেভাবেই গত দু বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে স্বামীকে আগলে রেখেছিলেন সুতপা।
ইরফানের মৃত্যুর পর একটি কোলা চিঠি লিখেছিলেন সুতপা,সেখানে সদ্য স্বামী হারা সুতপা লেখেন, কী করে বলব আমি একাই সবটা হারিয়েছে,কারণ আমি জানি হাজারো মানুষ আমার এই শোকে শামিল। তাঁরাও তো স্বজন হারানোর ব্যাথা পেয়েছে। আমার দুঃখে তাঁরাও সমব্যাথী। প্রয়াত অভিনেতার উপর একটা কারণেই অভিমান রয়েছে তাঁর। সেই কারণ হিসাবে লিখেছিলেন, ‘সারাটা জীবন কেন যে আমাকে এতটা আদরে রেখেছিল, কেন মেনে নিয়েছিল আমার সব আবদার? ওঁর পারফেকশনিস্ট মনোভাবটাই আমাকে কিছুতেই সাধারণে সন্তুষ্টি দেয় না!’
১৯৮৪ সালে ন্যাশান্যাল স্কুল অফ ড্রামায় পরিচয় ইরফান-সুতপার।সেখান থেকেই শুরু এই প্রেম কাহিনির। এক দশক পর ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, কোনও জাঁকজমক পূর্ন অনুষ্ঠান নয় আইনি মতে বিয়ের পর্ব সারেন। প্রেম, আর বিশ্বাসই ছিল তাঁদের এই সম্পর্কের আধার। ধর্ম সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
আগামী জীবনটা স্বামীর দেখানো পথেই দুই ছেলে বাবিল ও আয়ানকে নিয়ে চলতে চান সুতপা।