আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে এরকম দুর্ভাগ্যজনক ভয়ানক ঘটনা ঘটতে পারে, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ।
ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় থেকে শ্রীজাত, পরমব্রত, সৃজিতরা। এবার এক জনৈক নাম না করে আক্রমণ করেছেন কবীর সুমনকে। তাঁর এই পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনিরুদ্ধ বল লেখেন, ‘একজন নামী সঙ্গীত শিল্পী দিনের পর দিন মহিলাদের নিয়ে কদর্য ভাষায় কথা বলে গেছে তবুও আমরা তাকে সেলিব্রেট করেছি, তার গানের লাইন লিখে প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করেছি, তার জন্মদিনে বড় বড় প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছি। তারপর লোকজনকে বুঝিয়েছি আসলে কী জানিস - শিল্প আর শিল্পী এই দুটো তো আলাদা। তারপর আবার এরকম মানুষজনকে সেলিব্রেট করেছি।’
কোথাও তিনি কবীর সুমনের নাম নেননি। তবে কমেন্ট সেকশনে অনেকেই সুমনকে নিয়ে রীতিমতো নিন্দে করেছেন। বিশেষ করে যেভাবে গায়ক বামফ্রন্ট নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর ধনঞ্জয় প্রসঙ্গ টেনে সমালোচনা করেন সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকী, বুদ্ধদেববাবু মারা যাওয়ার পর তাঁর করা সেই পোস্টে রীতিমতো সমর্থন ছিল তাঁর ধর্ষণে অভিযুক্ত ধনঞ্জয়ের দিকেই। সেই পোস্টেও নেট-নাগরিকরা তুলোধনা করেন সুমনকে।
অবশ্য অনিরুদ্ধ বলের এই সোশ্যাল পোস্ট শুধুমাত্র কবীর সুমনকে নিয়ে নয়। তাঁর এই লেখার উদ্দেশ্যই ছিল মেয়েদের শরীর নিয়ে কদর্য আক্রমণ করা পুরুষদের বিরুদ্ধে, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া সেইসমস্ত মানুষগুলোকে নিয়ে। সঙ্গে অবশ্যই প্রতিবাদ না করে, মুখ বন্ধ করে রাখা আমজনতাকে নিয়ে।
তিনি লেখেন, ‘শুধু সঙ্গীত শিল্পী বলে নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরকম শিল্পীদের লিস্ট রীতিমতো লম্বা। আমরা প্রতিবাদ করিনি পাছে আমাদের ইস্থেটিক জীবনধারায় এক ফোঁটা চোনা পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনেও বন্ধুবৃত্তে এমন এমন মানুষকে অ্যালাও করেছি যারা আসলে মেয়েদের মানুষ বলেই কনসিডার করে না, ভেবেছি এই তো কিছুক্ষণ একসঙ্গে হইহুল্লোড় করবো তারপর আবার যে যার জীবনে ফিরে যাবো। এই টুকু সময়ের জন্য আবার কেন এসব নিয়ে মাথা ঘামানো। আমরা বারবার নিজেদের নিশ্চিন্ত যাপনকে অমলিন রাখার তাগিদে এগুলোকে এড়িয়ে গিয়েছি। কেউ কাউকে রেপ থ্রেট দিলে ভেবেছি এ তো হিট অফ দ্য মোমেন্টের কথা, থোরাই না সিরিয়াসলি বলেছে? আমরা একবারের জন্যেও ভাবিনি আমাদের ভাষাতে, আমাদের প্রয়োগ করা শব্দে রেপ নরমালাইজ হলে আস্তে আস্তে সমাজেও সেটা নরমালাইজ হবে।’
‘এবার হয়তো অনেকে বলবে আমরা তাহলে কী করবো? আইন নিজের হাতে তুলে নেবো। না, সেটা হয়তো নিতে পারবো না, তাছাড়া আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আমরা কে? কিন্তু আমরা কি পারি না ওই নির্দিষ্ট শিল্পীদের বয়কট করতে? আমরা কি পারি না বাকি বন্ধুদের বলতে- ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি গেট টু গেদারে এলে আমি যাবো না, আমরা কি পারি না যে ব্যক্তিটি রেপ থ্রেট দিচ্ছে তাকে মুখের উপর ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিতে যাতে সে এই ধরণের কথা বলার আগে আরও দশবার ভাবে। আসলে আমাদের এই ক্ষণিকের ঝামেলা এড়িয়ে চলার প্রবণতাই বিন্দুর মতো জমতে জমতে আমাদের অলক্ষ্যেই বিশাল আকার ধারণ করে। আমাদের জন্য হয়তো এই নিয়তিই অপেক্ষা করে আছে। আমরাই হয়তো আজকের এই দিনের জন্য সবথেকে বেশি দায়ী।’, আরও লেখেন তিনি।
ধনঞ্জয় নিয়ে কবীর সুমনের বক্তব্য:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কবীর সুমন লেখেন, ‘ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় আপনাকে ভুলিনি, ভুলব না।আপনাকে ভুলিনি ভুলব না। নিতান্ত circumstancial evidence এর ভিত্তিতে আপনার ফাঁসি হয়েছিল। সেসময়ের রাজ্য সরকার প্রধানের স্ত্রী ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিককে নিয়ে পথসভা করেছিলেন - আপনাকে ফাঁসি দেওয়ার পক্ষে জনমত জাগিয়ে তুলতে। আমরা কেউ আপনার ফাঁসি আটকাতে পারিনি, ধনঞ্জয়। আজ খুব মনে পড়ছে আপনাকে। সত্যি বলতে, আমিও তো ৭৫ পেরোনো বুড়ো। খেয়াঘাটে অপেক্ষায়।’