জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-রকমের প্রতিক্রিয়া। শাসক শিবিরের অনেকেই এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। ‘পুজোর আগে লোকে এতদিন শুনছি জিমে যেত, ডায়েটিং করে স্লিম হওয়ার চেষ্টা করত, কিন্তু এ বছর ফিট হওয়ার বেস্ট ক্র্যাশ কোর্স অনশন থিম…’। অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কটাক্ষ করে এমন কথা লিখেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। সেই পোস্ট ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন শাসকদলের মুখপাত্র তথা কাউন্সিলর। কিন্তু শুধু অরূপ নন, ট্রোলিং আর কটাক্ষে জর্জরিত হতে হল তাঁর স্ত্রী সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। যা কোনওভাবেই কাম্য নয়।
রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই সম্রাজ্ঞীর। তিনি একধারে লেখিকা, অন্যধারে চিত্রনাট্যকার। একধিক ওয়েব সিরিজ ও ছোটপর্দার চিত্রনাট্য লেখেন। এই ঘটনার পর নেটিজেনদের অনেকে এমনটাও বলেন, স্বামীর রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেই নাকি কাজ পান সম্রাজ্ঞী। এই বিদ্রুপ দেখে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল সম্রাজ্ঞীর। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া জবাব দিলেন।
ফেসবুকে লেখিকা তিনি স্পষ্ট জানান, স্বামীর বক্তব্যকে তিনি সমর্থন করেননি। সেটা পাবলিক কমেন্টে স্পষ্ট করেছিলেন। পরে অরূপবাবু ওই পোস্টটি ডিলিটও করে দেন। সম্রাজ্ঞী লেখেন, ‘কোথাও আঘাত লাগলে তার প্রত্যাঘাত থাকে জানি বলেই কাল রাত থেকে হওয়া ট্রোলিং নিয়ে কিছু বলার নেই আমার। কারণ বললেও কেউ শুনবেন এমন নয়। অরূপকে ট্রোল করতে গিয়ে দেখলাম কেউ কেউ বলছেন যে TMC আসার পর নাকি আমি সেলিব্রিটি কবি হয়েছি , আরও কী কী সব। একটা তথ্য দিয়ে রাখি। TMC সরকারে এসেছে ২০১১-য়। ২০১৮-য় সাহিত্য অকাদেমি যুব যখন পাই তখন কেন্দ্রে বিজেপি। এবং তখনও রাজ্যের কোনও পুরস্কার আমি পাইনি। বাংলা অকাদেমি পাওয়ার সময়কাল ২০২৩। এই ১২ বছরে বরং দু-একবার সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকতে ভুলে গেছে এমনও হয়েছে। তাছাড়া আপনাদের চিন্তার এমনিও বেশি কারণ নেই কারণ এখন আমি কবিতা খুব কম লিখি। কোনও বড় জায়গায় লিখি না’।
সম্রাজ্ঞী পালটা প্রশ্ন করেন, নারীর জন্য যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে নারী কে টার্গেট? সম্রাজ্ঞী লেখেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে নারী আন্দোলন করুন অথচ মেয়েদের তার স্বামী ও বাবার পরিচয়েই চিনুন। সে নিজে যাই অর্জন করুক না কেন ভুলেও তাকে তার স্ব-পরিচয়ে চিনবেন না। অপরের রুচি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অবশ্যই তার পরিবারকে টেনে আনবেন, তা না হলে যুদ্ধ হয় নাকি? আমার পরিবার পরিজন বন্ধু , কোনও পৃথিবী কোনওদিনই হোমোজিনিয়স ছিল না।’
সম্রাজ্ঞী আরও লেখেন তিনি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেও তাঁর স্বামী কোনওদিন তাঁকে পালটা প্রশ্ন করেননি। সম্রাজ্ঞী জানান, ‘অরূপকে বলেছি, ঝগড়া করেছি কিন্তু মনেও রেখেছি যে আমার কোনও পথে কোনওদিন বাধা দেয়নি ও। শ্যামবাজার থেকে ফিরে, মিছিল থেকে ফিরে মুখ হাত পা ধুয়ে যখন খেতে বসেছি, প্রশ্ন করেনি। বলেনি যে তুই বিরুদ্ধ মত ধারণ করছিস কেন? আমি অনেক দাম্পত্য দেখেছি যেখানে এক সুরে কথা বলতে হয়। মত না মিললে সবসময় জীবনের পথ আলাদা করে নিতে হবে এমন তো নয়। সম্পর্ক বা দাম্পত্যের কোনও নির্দিষ্ট নিয়মাবলী তো থাকে না। গুগল করে এমন অনেক দম্পতিদের কথা জেনে নিতে পারেন যারা এমনকী ভিন্ন রাজনৈতিক দলও করেন’।
সবশেষে তিনি লেখেন, 'আপনাদের সবার পুজো ভালো কাটুক। ডাক্তাররা অনশনে বসেছেন যাঁরা সবার সুস্থতা কামনা করি। অভয়ার বিচারের দিকে তাকিয়ে থাকি। এই অস্থির সময় পেরিয়ে পারস্পরিক সৌজন্যটুকু থাকুক সমাজে। যাতে একসঙ্গে আর জি কর , জয়নগর সবটার জন্য লড়াই করা যায়।
পুনশ্চ: অরূপের আর আমার রাজনৈতিক ভাবনা অনেক সময়ই মেলেনি আবার কিছু সময় মিলেছে। কিন্তু আমার কোনও বক্তব্য বা কর্মের দায়িত্ব যেমন ওর নয়, ওরটাও আমার নয়। এটা এই শেষবারের মতো লিখলাম। আপনারা বুঝলে ভালো। না বুঝলেও অসুবিধে নেই। আজকাল আর ভ্যালিডেসনের প্রয়োজন পড়ে না'।