বিগত দিনগুলিতে বারবার বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর থেকেই সেদেশের একাধিক জায়গায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের খবর মিলেছে। বহু হিন্দুকে খুন করার অভিযোগও উঠেছে। ভাঙা হয়েছে একাধিক হিন্দু মন্দির। এমনকি বিক্ষোভের নামে হিন্দুদের বাড়িঘর লুঠের ঘটনাও ঘটেছে। আর এবার প্রতিবাদে সরব হলেন বাংলাদেশি হিন্দুরা।
শুক্রবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হিন্দুরা বিশাল মিছিল করেন। এরপর শনিবার ঢাকা শহরে হিন্দুদের সমাবেশ হয়। এদিকে শনিবার চট্টগ্রাম শহরেও বিশাল মিছিল হয়। ঢাকার সমাবেশে সমাবেত কণ্ঠে হিন্দু জনতাকে স্লোগান দিতে শোনা যায়, ‘আমার মাটি, আমার মা, এই দেশ ছাড়ব না, দেশটা কারোর বাপের না।’ আবার কেউ হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে ‘জবাব চাই জবাব দাও’ স্লোগান তুলতেও দেখা যায়। স্লোগান ওঠে- 'মঠ, মন্দিরে হামলা কেন প্রশাসন চুপ কেন', 'মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার'। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ঢাকায় হিন্দুদের সেই সমাবেশের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
আরও পড়ুন-স্বৈরাচারী কন্যার জন্যই বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা হয়েছে, ধিক্কার জানাই, আর বলতে চাই…: বাঁধন
তবে শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামের চোরাগী পাহাড় এলাকায় হিন্দু ধর্মাম্বলম্বীদের মিছিলের ছবিও উঠে এসেছে অভিনেত্রী বাঁধন ও প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকের পাতায়।
প্রসঙ্গত, ছাত্র আন্দোলনে সামিল হয়ে প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তবে শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক, নারীবান্ধব, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক, এমনটাই চেয়েছিলেন বাঁধন। একইভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি তুলেছিলেন দেশ থেকে বিতাড়িত, প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আর এদের দুজনের ফেসবুকের পাতাতেই বাংলাদেশে গড়ে ওঠা হিন্দুদের প্রতিরোধের ছবি।
গানের মাধ্যমে প্রতিবাদে সামিল এক হিন্দু তরুণীর ভিডিয়ো নিজের ফেসবুকের পাতায় পোস্ট করেছেন তসলিমা।
এদিকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ধীরে ধীরে তাই অশান্ত বাংলাদেশের ছবিটা কিছুটা হলেও আয়ত্তে আনার চেষ্টা চলছে। আর তাই মাতৃভূমিকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখে ফেসবুকের পাতায় তসলিমা লিখেছেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা ইস্কুলে ফিরে যাক। সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাক। এনজিও কর্মীরা এনজিওতে ফিরে যাক। অধ্যাপকরা ক্লাসরুমে ফিরে যাক। রাজনীতিকরা আলোচনা করুক, দেশ পরিচালনা করুক।’
প্রসঙ্গত, এই আবহে বাংলাদেশীসংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংসদে ১০ শতাংশ আসনে হিন্দুদের সংরক্ষণের দাবিতে পোস্টার প্রদর্শন করা হয় প্রতিবাদ মিছিলে। এছাড়া আন্দোলনকারীদের আরও দাবি - ধর্মীয় কারণে কোনও হিন্দু হিংসার শিকার হলে দ্রুত তদন্ত বিচার করতে হবে। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের পরে হিন্দুদের যত ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। হিন্দুদের মন্দিরের জন্যে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে প্রতিবছর। ধর্মীয় কারণে হিন্দুরা যাতে সামাজিক কিংবা চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।