সমরেশ মজুমদার চলে গিয়েছেন আজ বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। কিন্তু তাঁর স্মৃতি থেকে এখনও বেরিয়ে উঠতে পারছেন না অনেকেই। যেমন তাঁর অনুজ এবং ভাতৃসম লেখক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়। জানালেন সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে শেষ বলা কথাগুলোর স্মৃতি।
ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় জানান তাঁর সঙ্গে সমরেশ মজুমদারের শেষ কথা হয় ২৩ এপ্রিল। তিনি বাংলাদেশ যেতে চেয়েছিলেন। তাঁদের শেষ কথা কথার স্মৃতি ভাগ করে নিলেন তিনি ফেসবুকের পাতায়।
ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় লেখেন, 'শেষ কথা ২৩শে এপ্রিল, ত্রিদিব, আমার এনএবিসি যাওয়া হবে না। আহা, আপনি এখনই নেগেটিভ ভাবছেন কেন দাদা? যথেষ্ট সময় আছে। ডক্টর তো আপনাকে ফোনে বললেন, চলে যাইয়ে। আমি তো আমার শরীরটা বুঝি। গৌতম আমার খুব প্রিয় ছেলে, বিজনেস ক্লাস টিকিট পাঠাচ্ছে, সব ঠিক। কিন্তু অতটা পথ, প্রায় ১৮ ঘন্টার ফ্লাইট, নাহ্, পারব না। তুমি বরং আমার বাংলাদেশের ভিসাটা করিয়ে দাও। আধঘন্টার ফ্লাইট, 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' থেকে বারবার বলছে, শুনলাম তোমরাও যাচ্ছ, তোমাদের সঙ্গে যাব।'
জানালেন গত কয়েক বছর ধরেই সমরেশ মজুমদারের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। অস্বস্তি থাকত। একই সঙ্গে বলেন গত এক বছর ধরে তাঁদের মধ্যে লাগাতার কথা হতো। উনি ফোন না করলেই অভিমান করতেন কালবেলার লেখক। তিনি লেখেন, 'গত বছরদুয়েক ধরে প্রায় রোজ সকালেই ফোনে কথা হতো। উনি করেছেন, আমি করতে ভুলে গেছি, অমনি প্রবল অভিমান, তুমি তো এখন অনেক বড় ব্যাপার ! আমাকেই তোমার খোঁজ নিতে হবে! আবার এই ফোনালাপেই আমাদের মধ্যে চলত নানারকম খেলা! কখনো খাওয়া নিয়ে, কখনো লেখা নিয়ে, কখনো বাইরে যাওয়া নিয়ে, অসাধারণ সব 'গুল'। আমিও পালটা দিতাম, চলত সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। কখনো গুল ধরা পড়লে খেপেও যেতেন। এই যেমন গত ডিসেম্বরে আমেরিকা থেকে কবি গৌতম দত্ত এসেছে। দেখা করবে।'
সমরেশের প্রশংসায় তিনি বলেন উনি ছিলেন নারকেলের মতো, বাইরেটা শক্ত, ভিতরে নরম। তাঁর মধ্যে এক অমোঘ আকর্ষণ ছিল, যাঁরা একবার মিশেছে তাঁরা সেটা থেকে আর বেরোতে পারেননি বলেও দাবি করেন ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়। জানান দীর্ঘদিন ধরেই সিওপিডি রোগে আক্রান্ত ছিলেন সমরেশ মজুমদার। সঙ্গে মানসিক অবসাদে ডুবে যাচ্ছিলেন বলেও জানান তিনি। তাঁদের শেষ বারের স্মৃতিচারণ করে লেখেন, 'আমার সঙ্গে শেষ কথা হয় ২৩ এপ্রিল, রবিবার। ২৪ শে এপ্রিল ফোন করতে ভুলে গেছি। ২৫শে এপ্রিল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে চুমকি বলল, কী গো, কাল তো সমরেশদাকে কল করোনি। আজ একবার করো। বলতে বলতে ফোন বেজে উঠল, দোয়েল। ‘কাকু, বাবার মনে হয়, ফের কিছু হয়েছে। কীরকম করছেন। আমি অ্যাপোলোতে নিয়ে যাচ্ছি।’ ব্যস, তারপর... তার আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা!bবোঝাতেও পারব না, আমার মনের মধ্যে এখনও কী চলেছে। সব 'বিগ জিরো।'