তবলাবাদক, সুরকার, সঙ্গীতজ্ঞ জাকির আল্লা রাখা কুরেশিকে গোটা বিশ্ব চিনেছে জাকির হুসেন নামে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। জাকির হুসেন তবলায় হাত রাখলে দোলা লাগত হাজার হাজার ভক্তের হৃদয়ে। তিনি ‘একম এবং অদ্বিতীয়ম’। সোমবার ভোররাতে উস্তাদের প্রয়াণের খবর নিশ্চিত করেছে তাঁর পরিবার। সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি।
ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস থেকে উদ্ভূত জটিলতার কারণে হুসেনের (৭৩) মৃত্য হয়েছে বলে পরিবার জানিয়েছে। কিন্তু তাঁর শিল্পী অবিনশ্বর। উস্তাদজির প্রয়াণে মন ভারাক্রান্ত গোটা দেশের। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আজ নক্ষত্রপতন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজনীতির জগতের মানুষরাও এদিন রং ভুলে উস্তাদজির মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত।
জাকির হুসেনের প্রয়াণে শোকবার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, ‘কিংবদন্তী তবলা মায়েস্ত্রো উস্তাদ জাকির হুসেনজি’র প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। অনবদ্য প্রতিভার জন্য উনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তবলা নামের বাদ্যযন্ত্রকে বিশ্বের দরবারে স্থান করে দিয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় তিনি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। যাঁর তবলার ছন্দে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুগ্ধ হয়েছে। গ্লোবাল মিউজিকের সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মেলবন্ধনের নেপথ্যের অন্যতম কাণ্ডারী উস্তাদ জাকির হুসেন। ওঁর সৃষ্টি আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে। জাকিরজি’র পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।’
জাকির হুসেন শুধু নিজের প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তবলাবাদকই নন, একদিকে আল্লা রাখার পুত্র হিসেবে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন যেমন, তেমনই পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে তালবাদ্যের নানা আঙ্গিক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন আজীবন। উস্তাদজির মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও। তিনি লেখেন, ‘গভীরভাবে শোকাহত, দুঃখিত উস্তাদ জাকির হুসেনের এই অকাল মৃত্যুতে। মায়াস্ত্রো সর্বকালের সেরা তবলাবাদকদের মধ্যে অন্যতম। এই মৃত্যু দেশের এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা উস্তাজদির লাখ লাখ ভক্তের কাছে বিরাট বড় ক্ষতি। পরিবার ও প্রিয়জনদের জানাই সমবেদনা’।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং হুসেনের মৃত্যুকে 'অপূরণীয় ক্ষতি' বলে অভিহিত করেছেন।
আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জীব অরোরা বলেছেন, হুসেনের প্রয়াণে গোটা বিশ্ব তার ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। অভিনেতা কমল হাসানও সংগীত মায়েস্ত্রোর সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিভাগ করে নিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘জাকির ভাই! খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তবুও তিনি আমাদের যে সময় দিয়েছেন এবং তাঁর শিল্পের আকারে তিনি যা রেখে গেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বিদায়….’।
দুই সপ্তাহ ধরে মার্কিন মুলুকের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জাকির হুসেন এবং পরে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রবিবার রাতেই তাঁর মৃত্যুর খবর রটে যায়। পরে পরিবারের তরফে জানানো হয়, তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। সোমবার ভোরে পরিবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
হুসেন তার কর্মজীবনে চারটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যার মধ্যে তিনটি এই বছরের শুরুতে ৬৬তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে। ছয় দশকের কর্মজীবনে, সংগীতশিল্পী পেয়েছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন জাকির হুসেন।