দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশটির কে-পপ, কে-ড্রামা, সিনেমা, সঙ্গীত, পোশাক, খাবার ইত্যাদি সারা বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছে। কিন্তু এই সংস্কৃতি উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ। দেশটির স্বৈরশাসক কিম জং-উনের সরকার মনে করে, কে-পপ এবং অন্যান্য দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি উত্তর কোরিয়ার জনগণকে বিপথগামী করছে। সেই কারণেই উত্তর কোরিয়ায় কে-পপ দেখা, শোনা, গাওয়া বা নাচানোর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রকাশ করা এক ভিডিওতে দেখা গেল, দক্ষিণ কোরিয়ার নাটক দেখার অপরাধে দুই কিশোরকে ১২ বছরের কঠোর পরিশ্রমের সাজা দেওয়া হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তর কোরিয়ার একটি শহরের প্রধান সড়কে দুই কিশোর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি নাটক দেখছেন। হঠাৎ করেই ইউনিফর্মধারী অফিসাররা তাদের ঘিরে ধরে। অফিসাররা দুই কিশোরকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। অফিসাররা দুই কিশোরকে নিয়ে যায় একটি জনসমক্ষে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের ১২ বছরের কঠোর পরিশ্রমের সাজা ঘোষণা করা হয়। দুই কিশোরকে উত্তর কোরিয়ার একটি কারাগারে পাঠানো হয়।
এই ঘটনাটি উত্তর কোরিয়ায় কে-পপের জনপ্রিয়তার একটি প্রমাণ। দেশটির জনগণ দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট। কিন্তু সরকারের কঠোর শাস্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে এই সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে না।
কে-পপের জনপ্রিয়তা উত্তর কোরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি উত্তর কোরিয়ায় গণতন্ত্রের আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এপ্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা স্যান্ডের সভাপতি চোই কোয়ং বলেছেন, ‘এত কঠিন শাস্তি দেওয়ার দিকটি বিবেচনা করে, মনে হচ্ছে ভিডিওটি করা হয়েছে উত্তর কোরিয়ানদের সতর্ক করতে। যদি এটি সঠিক হয়, তাহলে বলা যায় উত্তর কোরিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির প্রচরণ রয়েছে।’
স্যান্ডের সভাপতি আরও বলেছেন, ‘আমি মনে করি ভিডিওটি ২০২২ সালে এডিট করা হয়েছে। কিম জং উনের জন্য যেটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো নতুন প্রজন্ম তাদের চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনেছে। কিম তাদের উত্তর কোরিয়ার চিন্তা ভাবনায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন।’
ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে, একটি উন্মুক্ত স্থানে দুই কিশোর দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে গ্যালারিতে বসে আছে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। ওই সময় বিচারক তাদের বিরুদ্ধে ১২ বছরের সশস্ত্র কারাদণ্ডের রায় দেন। এরপর কিশোরদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনা প্রসঙ্গে বলাবাহুল্য, এই ঘটনাটি কেবল একটি ঘটনা নয়, এটি উত্তর কোরিয়ার জনগণের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটি চিত্র। উত্তর কোরিয়ায় সরকার জনগণের জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ন্ত্রণ করে। তারা কী দেখবেন, কী শুনবেন, কী ভাববেন তাও সরকারই নির্ধারণ করে। এই কঠোর শাসনব্যবস্থার কারণে উত্তর কোরিয়ার জনগণ অনেকটা বন্দী অবস্থায় আছে।
কে-পপের জনপ্রিয়তার কারণ
কে-পপের জনপ্রিয়তার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কারণ হল, কে-পপের গানগুলি সুন্দর সুর ও তেজস্বী নৃত্যের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও, কে-পপ তারকারা তাদের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও স্টাইলের জন্য বিশ্বজুড়ে তরুণ-তরুণীদের কাছে জনপ্রিয়।
কে-পপের জনপ্রিয়তা উত্তর কোরিয়ায়ও ব্যাপক। দেশটির তরুণ-তরুণীরা কে-পপের গান শুনে, নাচ দেখে এবং কে-পপের পোশাক পরে তাদের আবেগ প্রকাশ করে। কিন্তু সরকারের কঠোর শাস্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে এই সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে না।
উত্তর কোরিয়ায় কে-পপের ভবিষ্যৎ
কে-পপের জনপ্রিয়তা উত্তর কোরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি উত্তর কোরিয়ায় গণতন্ত্রের আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
তবে, উত্তর কোরিয়ার সরকার কে-পপের জনপ্রিয়তা রোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটিতে কে-পপের গান ও ভিডিওর অবৈধ আমদানি ও বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। এছাড়াও, সরকার কে-পপের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবুও, কে-পপের জনপ্রিয়তা উত্তর কোরিয়ায় কমে যাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। বরং, সময়ের সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে পারে।