করোনা অতিমারীর ভয়াবহতা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয় সজাগ ও সতর্ক করে তুলেছে। করোনার কারণে এই দুই ক্ষেত্রে যে সচেতনতা আমাদের মনে এখন গড়ে উঠেছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। উন্নত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষম আহার, সংশোধিত জীবনযাপন প্রণালীর দিকে ঝুঁকেছে অধিকাংশ জনগন। ২০২২ সালেও সেই প্রবণতা বজায় রাখার ওপর জোর দিতে হবে সকলকে।
২০২২ সালে সুস্থ থাকার ৫টি টিপস ভাগ করে নিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অ্যান্ড পিডিয়াট্রিকসের এমডি ড: জেনিফার প্রভু।
১. বেশি করে সবুজ শাকসবজি খান
প্রতিষেধক ওষুধ হিসেবে শাকসবজির ক্ষমতাকে উপেক্ষা করবেন না। বহু সাধারণ ফল, সবজি, নাট, শস্য এবং ডাল রয়েছে যা রোগপ্রতিরোধকারী পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ।
শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে বছর শুরু করতে চান? তা হলে দেরি না-করে ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ খাদ্যবস্তু নিয়ে আসুন। পালক শাক, মেথি, লাল শাক, ব্রকোলি, ফুলকপি, বাধাকপি খেতে ভুলবেন না।
আবার জিঙ্কের সাহায্যে দূর হবে সমস্ত ভাইরাস। তাই মাশরুম, নাট, কুমড়োর বীজ, তিল, ডাল ও বিনস খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করুন। অন্য দিকে ইনফ্লেমেশান কম করার জন্য ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ উদ্ভিজ দুধ, যেমন সোয়া, আমন্ড, ওট, ভাত ও বিভিন্ন ফর্টিফায়েড সিরিয়াল খান।
২. তালিকা থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী খাদ্য বস্তু বাদ দিন
অনেকে বুঝতেই পারেন না যে, আপনি যা-ই খান না-কেন, তা সারা শরীরকে প্রভাবিত করবে, শুধু পাচনতন্ত্রকে নয়। হাঁটুতে ব্যথা, অ্যাকনে, মাথা ব্যথা ইত্যাদির জন্য আপনার খাবার-দাবারই দায়ী, অন্য কিছু নয়।
দুর্ভাগ্যবশত সর্বাধিক প্রো-ইনফ্লেমেটারি খাবার হল দুধ এবং দুগ্ধজাত উপাদান, যেমন দই, মাখন, চিজ, পনীর এবং ঘি। তবে অত্যাবশ্যকীয় এই খাদ্যবস্তুটি পুরোপুরি বাদ দেওয়ার পরিবর্তে সপ্তাহে এক-দুদিন ডেয়ারি ফ্রি ডে হিসেবে চিহ্নিত করুন। পরের দিন শরীর হাল্কা, শক্তিসম্পন্ন অনুভব করবেন। পাশাপাশি ব্যথাও কমতে থাকবে। এটি প্রমাণিত যে, ব্যক্তি যখনই দুগ্ধজাত খাবার বাতিল করেছেন, তাঁদের শরীরে কোনও না-কোনও ইতিবাচক প্রভাব দেখা গিয়েছে।
বর্তমানে উদ্ভিজ দুগ্ধজাত পদার্থের বাহুল্যের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে।
৩. এক্সারসাইজ করুন
কার্ডিওভাসকিউলার এক্সারসাইজের লাভ উপভোগের জন্য জিম যেতেই হবে এমন কোনও মানে নেই। আপনাদের কী জানা আছে, সপ্তাহে তিন দিন করে এবং প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের হার্ট পাম্পিং অ্যাক্টিভিটি হৃদরোগের ক্ষেত্রে ২-ফোল্ড প্রভাব বিস্তার করতে পারে?
হৃদগতি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ, শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন মস্তিষ্ক (ভালো মেজাজ ও মনোযোগের জন্য), অন্ত্র (অ্যাসিডিটি ও ব্লটিং কমাতে সহায়ক) এবং ত্বক (কম তেল ও অ্যাকনে)-এ অধিক পরিমাণে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করা।
এ ক্ষেত্রে জোরে হাঁটতে পারেন। আবার বাইরে বেরোতে না-পারলে নিজের বয়স ও যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও একটি ব্যায়াম অনলাইন ভিডিও দেখে শিখে নিন।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
জীবনযাপন প্রণালীতে অপর একটি সাধারণ পরিবর্তন আনা যাবে নিজের ঘুমের গুণ ও সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়ে। অপর্যাপ্ত ঘুম ব্যাকুলতা, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই এই নববর্ষে নিজের ঘুমের গুণমান বৃদ্ধির প্রতিজ্ঞা করুন এবং নিজের জীবনে এই ইতিবাচক পরিবর্তন উপভোগ করুন। কী ভাবে করবেন? সন্ধ্যা বা রাতে এক্সারসাইজ করলে গভীর ও দীর্ঘক্ষণ ঘুমাতে পারবেন। সপ্তাহে ১ বা ২ দিন এমন করলেও উপকার পাবেন।
ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে নিজের সমস্ত ডিভাইস টার্ন অফ করে দিন। ভালো বই, শান্তি প্রদানকারী মিউজিক শুনুন, আবার গরম জলে স্নান করতে পারেন বা ধ্যানও করতে পারেন। এ ছাড়াও নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা ভালো ঘুমে সাহায্য করে। এই সাপ্লিমেন্ট আবার নিয়মিত গ্রহণ করার অভ্যাসও গড়ে তোলে না। নানান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মেলটোনিন, অশ্বগন্ধা এবং এল-থিয়ানিনের কার্যকরিতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
৫. নতুন কিছু শিখুন
নতুন স্কিল শেখা, নতুন হবি তৈরি করা বা কোনও দীর্ঘকালীন গোল নির্ধারণ করেও নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন। লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যান। এটি অসাধারণ মুড বুস্টারের কাজ করতে পারে।
নানান সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, যাঁদের কোনও হবি নেই, তাঁদের মধ্যে মুড ডিসঅর্ডার দেখা দেওয়ার প্রবণতা বেশি।
আবার হবির অন্যতম উপকারিতা হল, এর ফলে আপনি নিজের মতো অনেকের সন্ধান পাবেন। নিজের বন্ধু ও কমিউনিটি সাপোর্ট সাইকেল গড়ে তোলা ভালো খাবার খাওয়া ও ব্যায়ামের মতোই জরুরি।
তাই বেশি দেরি না-করে, ২০২২-এ নতুন কিছু করুন। এই সুঅভ্যাসগুলি আপনাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তার কোনও ধারণা করা যায় না।