ভারতের প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন মহিলা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা PCOS-এ আক্রান্ত। এটি একটি সত্যতা, যা স্বীকার করে নেওয়াই শ্রেয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ এন্ডোক্রিন জটিলতা যার কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটে, ফলে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। তবে PCOS কোনও সম্পূর্ণ রোগ নয়। একে মেডিক্যাল কন্ডিশান বলা চলে। তবে জীবনযাপন প্রণালীতে সামান্য পরিবর্তন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, উদ্ভিজ পুষ্টিকর আহারের মাধ্যমে PCOS-এর লক্ষণগুলিকে কমানো যায়।
PCOS-এর কারণ
নানান কারণে PCOS-কে রোগের তকমা দেওয়া হয় না। এটি আসলে নানান লক্ষণের সমষ্টি, যা শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে থাকে। তবে PCOS-র নির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। নানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা জীনগত ও পরিবেশকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন।
PCOS-এর ক্ষেত্রে ওভারি অধিক পরিমাণে এন্ড্রোজেনস বা পুরুষ সেক্স হরমোন নিঃসৃত করে। উল্লেখ্য, মহিলাদের মধ্যে অতি অল্প পরিমাণে এন্ড্রোজেন উপস্থিত থাকে। এর ফলে ওভারিতে প্রচুর পরিমাণে সিস্ট বা তরল পদার্থে পূর্ণ থলি জমতে থাকে, অতিরিক্ত পরিমাণে অবাঞ্ছিত চুল উৎপাদন, অ্যাকনে, ওবেসিটি দেখা দেয় এবং মাসিক চক্রের অনিয়মিততা দেখা যায়। সন্তান জন্মের সম্ভাবনাকেও কম করে দেয় PCOS।
এটি আবার ইনসুলিন রোধের অন্যতম কারণ। এ ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন তৈরি করলেও সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারে না। এর ফলে ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়বিটিজ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তবে PCOS-এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এখানে ৬টি উপায় সম্পর্কে জানানো হল, যার সাহায্যে প্রাকৃতিক উপায় PCOS-এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে—
১. গোটা অন্ন ও শস্য- এমন খাবার খান, যা ধীরে ধীরে হজম হয়, কারণ এটি শরীরের ইনসুলিনের স্তরে কম প্রভাব বিস্তার করে। ওটস, ব্রাউন রাইস এবং কিনোয়া খেতে পারেন। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে লেগামস, ডাল, নাট, বীজ এবং কাঁচা ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ করুণ- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে প্রোটিন। খাদ্য তালিকায় স্বচ্ছ প্রোটিন অন্তর্ভূক্ত করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরে শক্তি ও সামর্থ্যের জোগান পাওয়া যায়। একজন স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিজের ওজনের ০.৮ গ্রাম প্রতি কেজি প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। যেমন, কারও ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, তা হলে ০.৮*৬০= প্রতিদিন ৪৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
৩. সবুজ শাকসবজি ও বেরি- সবুজ শাকসবজি পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ এবং এতে ক্যালরির পরিমাণও কম। তাই এগুলিকে অবশ্যই নিজের খাদ্য তালিকায় রাখবেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, PCOS-এ আক্রান্ত অধিকাংশ মহিলার মধ্যে ভিটামিন বি-র অভাব থাকে। কেল, পালক শাকের মতো শাকপাতায় প্রচুর পরমাণে ভিটামিন বি থাকে। আবার PCOS থাকলে রাস্পবেরি, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরিও খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন।
৪. হার্ভ ও হার্বাল এক্সট্র্যাক্ট- শতাভরি, অশোকর মতো ভারতীয় হার্ভ PCOS মোকাবিলায় সাহায্য করে। PCOS আক্রান্ত মহিলাদের হরমোনে ভারসাম্য বজায় রাখতে শতাভরি সাহায্য করে থাকে। আবার এস্ট্রোজেনকে বুস্ট করতে সাহায্য করে অশোক। মহিলাদের ত্বকের স্বাস্থ্যের পক্ষে এই এস্ট্রোজেন উপযোগী।
৫. অ্যান্টি ইফ্ল্যামেটরি খাবার- অলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট PCOS-এর কারণে সৃষ্ট প্রদাহের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। তবে প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং রিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করবেন না, এর ফলে প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সামগ্রিক জীবন-যাপন- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সামগ্রিক জীবন-যাপন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ওয়ার্ক আউট করুন। প্রতিদিন দৌড়নো, যোগাসন বা অন্যান্য ব্যায়াম করলে ইনসুলিনের স্তর কম করা যায়। প্রাণায়াম বা ধ্যান করলে অবসাদ বা চাপ কম হয়।