ডায়বিটিস বা মধুমেহ— এই সমস্যাটি চিরকাল চিন্তার বিষয় হয়ে ছিল। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যুগে ডায়বিটিসদের রোগীদের কপালের ভাঁজ আরও বাড়ছে। ডায়বিটিকদের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়লেই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন, পরিবার-পরিজন এবং রোগী নিজে। কারণ ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে মধুমেহ। আবার ডায়বিটিসের ফলে রেনাল ইস্যু, বদহজম, হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
দুধরণের ডায়বিটিস হয়ে থাকে। ডিয়বিটিস টাইপ-১ এবং ডায়বিটিস টাইপ-২। টাইপ-১ ডিয়বিটিস সাধারণত জেনেটিক হলেও, টাইপ-২ ডায়বিটিস হয়ে থাকে ভুল জীবনযাপন প্রণালীর জন্য। এই ধরণের জীবনযাপন ডায়বিটিসের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে—
- জাঙ্কফুড খাওয়া।
- শারীরিক কসরৎ বা ব্যায়াম না-করা।
- নিয়মিত চেক আপ না-করানো।
- খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস না-করা।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে না-রাখা।
এখানে এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল, যা বার বার ঘটতে শুরু করলে সতর্ক হন। দেরি হওয়ার আগে, তৎক্ষণাৎ নিজের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদ্যোগী হন।
১. তৃষ্ণা- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান সত্ত্বেও যদি বার বার তৃষ্ণা পায়, তা হলে ব্লাড শুগার টেস্ট করিয়ে নিন। কারণ মধুমেহ থাকলে, অতিরিক্ত গ্লুকোসকে নিয়ন্ত্রণ করতে কিডনিকে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। প্রস্রাবের মাধ্যমে এই গ্লুকোজ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে বেরিয়ে যায় নানান প্রয়োজনীয় মিনরালে। ফলে ঘন ঘন তৃষ্ণা পায়।
২. বার বার মূত্রত্যাগ- ডিহাইড্রেশানের জন্য বার বার মূত্রত্যাগ দায়ী। শরীরের অতিরিক্ত শর্করার অপসারিত করে দেওয়া প্রয়োজন। তাই ডায়বিটিস রোগীদের মধ্যে বার বার মূত্রত্যাগের প্রবণতা দেখা দেয়।
৩. ক্ষিদে- ডায়বিটিস থাকলে শরীর গ্লুকোজ হজম করতে পারেন না। শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গ্লুকোজ প্রয়োজনীয়। এই অতিরিক্ত গ্লুকোজ হজম না-হলে শক্তির অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং এর ফলে বার বার ক্ষিদে পেতে পারে।
৪. শুষ্ক ত্বক- রক্তে শর্করার পরিমাণ অধিক বেশি থাকলে ত্বকের কলাগুলির শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে ত্বক চুলকাতে শুরু করে। এমনকি ইনফেকশানও হয়ে থাকে।
৫. অঙ্গে অসাড়তার অনুভূতি- যে স্নায়ুগুলি মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল নিয়ে অঙ্গে পৌঁছে দেয়, সেগুলিকে ধ্বংস করে দেয় মধুমেহ। ফলে অঙ্গে অসাড়তা দেখা দিতে পারে।
৬. শ্লথ গতিতে আরোগ্য লাভ- নতুন কোষ গঠনের প্রক্রিয়াকেও শ্লথ করে মধুমেহ। ফলে কোনও রোগ থেকে সেড়ে উঠতে সময় লাগে।
৭. ঘা- মধুমেহর কারণে রক্তনালী নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এমন হয়।
৮. ওজন কমে যাওয়া- অপর্যাপ্ত পরিমাণের ইনসুলিনের কারণেও কিছু ব্যক্তির ওজন কমতে শুরু করে। ইনসুলিন গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি নির্গত হতে দেয় না, তাই এমনটি হয়ে থাকে। এর ফলে শক্তি উৎপন্ন করার জন্য শরীরে উপস্থিত ফ্যাট পুড়তে শুরু করে। তাই ওজন কমার প্রবণতা দেখা দেয়।
আপনি কী ঝুঁকির মুখে আছেন?
এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের মধ্যে ডায়বিটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল, যার ফলে বুঝতে পারবেন, যে আপনি ঝুঁকির মুখে আছেন কী না—
- বয়স ৪৫-এর বেশি এবং নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন করলে।
- অধিক বেশি ওজন হলে।
- একদমই এক্সারসাইজ না-করলে।
- পরিবারে কারও ডায়বিটিস থাকলে।
- রক্তচাপের সমস্যা থাকলে।
- কোলেস্টেরল থাকলে।
তবে সুখবরও রয়েছে! সুস্থ জীবনযাপন প্রণালী ডায়বিটিসিরে সম্ভাবনাকে অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সক্ষম। এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম আহার গ্রহণ জরুরি।