রণবীর ভট্টাচার্য
শুক্রবার, অর্থাৎ ৬ মে সমগ্র হিন্দু সমাজের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজ আদি শঙ্করাচার্যের ১২৩৪তম আবির্ভাব দিবস। ভারতের অন্যতম কিংবদন্তি ধর্মীয় নেতা তথা দার্শনিক জগৎগুরু শঙ্করাচার্য কেরালার কালাডিতে এক রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় ধর্ম সংস্কৃতির প্রতি ওঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শঙ্করাচার্য জয়ন্তী পালন করা হয়।
শঙ্করাচার্যের জন্ম নিয়েও কথিত আছে, যখন সমাজে পবিত্রতা নষ্ট হয়েছিল আর মানুষ অধর্মের দিকে অগ্রসর হয়েছিল, তখন মুনি ঋষিরা ভগবান শিবের কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভগবান শিব তখন জানান, উনি আদি শঙ্করাচার্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করবেন এবং হিন্দু ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করবেন ধর্মের পথে। তাই মনে করা হয় ওঁর জন্মই হয়েছিল হিন্দু ধর্মকে নতুন করে দিশা দেওয়ার জন্য। অনেকটা এই কারণেই আদি শঙ্করাচার্য চারটি মঠ তৈরি করেন চার দিকে যথাক্রমে শৃঙ্গেরি মঠ, গোবর্ধন মঠ, সারদা মঠ এবং জ্যোতির মঠ। এরপর উনি নিজের পছন্দের চার শিষ্যকে এই মঠগুলোর দায়িত্ব দেন। এই মঠগুলো পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈদিক ধ্যানজ্ঞান প্রসারে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
আদি শঙ্করাচার্যের সন্ন্যাস গ্রহণ নিয়ে যুগ যুগ ধরে একটি কাহিনি শোনা যায়। যখন ওঁর সাত বছর বয়স, তখন সন্ন্যাসগ্রহনের দিকে তাঁর তীব্র ইচ্ছে হয়। কিন্তু তাঁর মা অনুমতি দিচ্ছিলেন না। একদিন শঙ্করাচার্য যখন পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন, তখন একটি কুমির তার পা কামড়ে ধরে। সেই সময়ে উপস্থিত ওঁর মাকে তিনি বলেন যে যদি তিনি ওঁকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তাকে ছেড়ে দেবে। ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মা শেষমেশ অনুমতি দেন। পরবর্তীকালে ওই নদীতে আর কোনও দিন কুমির দেখা যায়নি।
আদি শঙ্করাচার্যের হাত ধরেই হিন্দু ধর্মে প্রবর্তন হয়েছিল ৫টি মূর্তির পুজো যথাক্রমে গণেশ, সূর্য, বিষ্ণু, শিব ও দেবী। ১৬ বছর বয়সে বেদ-জ্ঞানী হয়ে ওঠেন তিনি। সাহিত্যের দিক থেকেও আদি শঙ্করাচার্যের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তিনি বেশ কিছু ধ্যানের মন্ত্র প্রবর্তন করেন যেমন সৌন্দর্য লহরী, শিবানন্দ লহরী, নির্বাণ শলকাম, মনীষা পঞ্চকাম। এছাড়া উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র, ভাগবতগীতার ভাষ্য রচনা করেন। কবি হিসেবেও সমসাময়িক হিন্দু সমাজে যথেষ্ট সমাদৃত ছিলেন তিনি।
বলাই বাহুল্য, অদ্বৈত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন কাজ করে গিয়েছেন আদি শঙ্করাচার্য। বারবার তিনি বলেছেন যে ব্রহ্মাই হল জগতের এক মাত্র সত্য। মাত্র ৩২ বছর বেঁচেছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি হিন্দু ধর্মকে দিশা দেখিয়েছিলেন বেদের পথে।