পালমোনারি ফাইব্রোসিসের নাম অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু একজনের জীবনযাত্রায় এর প্রভাব কতদূর হতে পারে, সে বিষয়ে অনেকেই অবহিত নন। এটি কেবল ফুসফুসকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়, তাই নয়। বরং এটি ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতিও করে।
রোগটি সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে। শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে অবিরাম কাশি, ক্লান্তি, ওজন হ্রাসের মতো উপসর্গও হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে কোভিডের পরে অনেক রোগীই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শিশু, মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক, ধূমপায়ীরা এবং প্রাক্তন ধূমপায়ীরাও বিভিন্ন কারণে পালমোনারি ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
'রোগটি গুরুতর। এমন রোগ যা আপনার মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তাছাড়া পালমোনারি ফাইব্রোসিসের কারণে ফুসফুসের ক্ষতি চিরস্থায়ী। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ নির্ণয়, দ্রুত চিকিৎসা, পর্যাপ্ত হাইড্রেশন, ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট নেওয়া রোগ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে,' বললেন ডাঃ শ্যাম থামপি, সিনিয়র কনসালট্যান্ট রেসপিরেটরি/পালমোনারি মেডিসিন, এসিআই কামবাল্লা হিল হাসপাতাল, মুম্বই।
পালমোনারি ফাইব্রোসিসের লক্ষণ
* শ্বাসকষ্ট
* ওজন হ্রাস
* ক্লান্তি
* শুষ্ক কাশি
* অব্যক্ত ওজন হ্রাস
* পেশিতে টান
* আঙুল বা পায়ের আঙ্গুলের ডগা গোলাকার হয়ে যাওয়া
প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত চিকিৎসাই এই রোগ মোকাবিলা করার শ্রেষ্ঠ চাবিকাঠি।
'উপসর্গগুলি ব্যক্তি হিসাবে পরিবর্তিত হতে পারে। সময়ের সঙ্গে উপসর্গগুলি আরও খারাপ হতে পারে। স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। প্রাণহানির আশঙ্কাও হতে পারে। তীব্রতা দেখা দিলে ভেন্টিলেটরেও রাখতে হতে পারে।
কী কারণে পালমোনারি ফাইব্রোসিস হয়?
এটি হলে ফুসফুসের বায়ু থলির(অ্যালভিওলি) চারপাশে এবং মাঝের টিস্যুতে পুরু দাগ দেখা যায়। এইভাবে, অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাসের কারণে সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারবেন না। কিছুক্ষেত্রে টক্সিন, চিকিৎসা, রেডিয়েশন থেরাপি, এবং কিছু ওষুধ ফুসফুসের ক্ষতির জন্য দায়ী হতে পারে। যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এবং তারপরে কোভিড-১৯-এ সংক্রামিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এটি একটি সাধারণ ঘটনা, বললেন ডঃ থাম্পি।
পালমোনারি ফাইব্রোসিসের চিকিৎসা
পরীক্ষা করার পর, চিকিৎসক চিকিৎসার লাইন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন। অ্যান্টিবায়োটিক, কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ, অ্যান্টিফাইব্রোটিকস বা অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
পালমোনারি ফাইব্রোসিস নিয়ন্ত্রণ করার টিপস
নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান এড়িয়ে চলার মতো অভ্যাসই এই রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
* ফুসফুসের সহনশীলতা বাড়াতে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
* ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন
* পুষ্টি সংক্রান্ত পরামর্শ এবং সহায়তার জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
* ধূমপান করবেন না।
* দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় তাজা ফল, গোটা শস্য এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য যোগ করুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান। নিজে নিজে ওষুধ খেতে যাবেন না।
আরও পড়ুন : ডায়াবেটিস নিয়ে এই ১০ ভুল ধারণা আছে কি আপনার? সতর্ক না থাকলে হিতে-বিপরীত হবে