অ্যান্টিরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট হাঁটুর প্রধান লিগামেন্ট। এটি টিবিয়া হাড়কে সামনের দিকে পিছলে যেতে দেয় না এবং ফিমারকে হাঁটুর চারপাশে ঘুরতে সাহায্য করে। স্বভাবতই এই লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে হাঁটুর গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
কারণ: সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এইচটি ডিজিটালকে এই লিগামেন্টের গুরুত্ব সম্পর্কে জানালেন নেক্সাস ডে কেয়ার সেন্টারের অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ মনু বড়ুয়া। তাঁর কথায়, এই লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে শুধু হাঁটার অসুবিধা হয়, তা নয়, পায়ের স্বাভাবিক চলনও বন্ধ হয়ে যায়। নানা কারণেই লিগামেন্টটি ছিঁড়ে যেতে পারে।
ডাক্তারের কথায়, পায়ের খুব বেশি ব্যবহার হয় এমন ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। দৌড়ানো বা স্কেটিংয়ের সময় পড়ে অসাবধআনতায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া, খেলার সময় পা আচমকা সামনে বাঁ পাশের দিকে মুড়ে গেলে এসিএল (অ্যান্টিরিওর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট) ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
লক্ষণ: এসিএল ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, আঘাত লাগা জায়গাটি ফুলে গিয়েছে। এছাড়াও, হাঁটুর ভিতর কিছু আলগা হয়ে গেছে - এমন অনুভূতিও হতে পারে। এই অবস্থায় হাঁটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্বভাবত খেলার জগতে ফিরে যাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে।
রোগ নির্ণয়: মনু জানান, এই সমস্যা নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে ডাক্তার সম্পূর্ণ ঘটনাটি শুনতে চান। এরপর হাঁটুর চারপাশে পা কতটা ঘুরছে বা ঘুরছে কিনা, তা সতর্কভাবে দেখা হয়। এই সময় বোঝা যায়, লিগামেন্ট ও মেনিসাস কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা হয় লিগামেন্টের কোন জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
চিকিৎসা: এসিএল-এর চিকিৎসা তিনটি উপায়ে করা সম্ভব।
১. নন-অপারেটিভ: এসিএল ছিঁড়ে যাওয়া এই পদ্ধতিতে ঠিক করা যায় না। তবে, এতে সাময়িক আরাম মিলতে পারে। অনেক রোগী অপারেশনের জটিলতা এড়াতে চান। ফিজিওথেরাপি, ক্রায়োথেরাপির মতো থেরাপির সাহায্যে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করা হয়।
২. অপারেটিভ: এসিএল কতটা ছিঁড়ে গিয়েছে তার উপর অপারেশন নির্ভর করে। ফিমার বা টিবিয়া যে কোনও একটি হাড় থেকে এসিএল সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেলে তা অপারেশনের মাধ্যমেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। ইনভেসিভ অর্থ্রোস্কোপিক প্রক্রিয়ায় এই অংশটি সেলাই করে দেওয়া হয়। সেলাইয়ের পাশাপাশি হাড়ের অবস্থান ঠিক রাখতে স্ক্রু ব্যবহার করা হয়।
৩. ইন্টারনাল ব্রেস ওপশন: এই পদ্ধতি়টি সবচেয়ে উপকারী। এর মাধ্যমে বড় আঘাতের পাশাপাশি ছোট আঘাতও সারিয়ে তোলা যায়। এছাড়া সেরে ওঠার পর্বে নতুন করে পায়ে যাতে আঘাত না লাগে সেদিকেও নজর রাখে ইন্টারনাল ব্রেস পদ্ধতি।