কোভিড সেরে গেলে সব বিপদ কেটে গেল, এমন নাও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন কোভিডের পরেই দেখা দিতে পারে নানারকম জটিল সমস্যা। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড থেকে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ ও স্ট্রোক। ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হারলান ক্রুমহোলজ জানাচ্ছেন, দুরকম কোভিড বিশেষজ্ঞদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোভিডের প্রথম রূপটি ক্লান্তির কারণ হয়ে উঠছে। কোভিডের চোরা রূপটি বারবার চেহারা পাল্টে নতুন নতুন বিপদ তৈরি করছে। কোভিডের এই রূপটিই শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বাধার জন্য দায়ী। রক্ত জমাট বাঁধার ফলে স্ট্রোক হয়। নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে এই স্ট্রোকের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। হারলানের মতে, কোভিড হয়েছে এমন সব রোগীরই হঠাৎ বুকে ব্যথা, হঠাৎ দুর্বল লাগা, কথা বা দৃষ্টি ও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
২০২০ সালের শুরু থেকেই কমবয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের পর স্ট্রোকের প্রবণতা দেখা দিতে থাকে। তখন থেকেই বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, করোনা ভাইরাস রক্তনালিতেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের প্রবণতা আরও বেশি হয়। সম্প্রতি হার্ট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে ভেনম থ্রম্বোলিজম হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় ২.৭ গুণ বেশি। আক্রান্ত হলেও যাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ১০ গুণ বেশি। আর যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ১০০ গুণ বেশি। সমীক্ষাটি মোট ৫৪০০০ জন মানুষের উপর করা হয়।
মূলত রক্তের শ্বেত রক্তকণিকার এক বিশেষ ধর্ম স্ট্রোকের কারণ। শরীরের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার মেরামত করতে শ্বেত রক্তকণিকা ছুটে যায়। রক্তনালির ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনাই ঘটছে। ক্রুমহোলজের মতে, ভ্যাকসিনেশনের ফলে এই সমস্যার কতটা সমাধান সম্ভব, তা এখনও অজানা। সার্স কোভ-২ ভাইরাস আসার পর এই সমীক্ষা বেশি করা হয়নি।
ডাঃ জিয়াদ আল-আলির মতে, কোভিড হয়েছে এমন সবার ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে তা নয়। যে বিশেষজ্ঞরা প্রথম লং কোভিড নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন ডাঃ আল-আলি।
নিউরোসার্জারি পত্রিকার প্রধান লেখক ও থমাস জেফারসন হাসপাতালের নিউরোসার্জেন পাস্কাল জ্যাবোর জানান, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ফলে কমবয়সীদের মধ্যে এই ব্লকেজের আশঙ্কা তুলনায় বয়স্ক অথচ কোভিড আক্রান্ত হননি এমন মানুষের থেকে বেশি। ২০২০ সালে জ্যাবোর সিএনএন-এর এক সাক্ষাৎকারে এই আশঙ্কার কথা তুললে অনেকেই তাকে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক গবেষণা সেই আশঙ্কাকেই তুলে ধরছে। তবে বিশেষজ্ঞদের কথায় এতে প্যানিক করার প্রয়োজন নেই। বরং সাবধান থাকা বেশি জরুরি।