মাথাব্যথা থেকে শুরু করে পেট ব্যথা, আজকের জীবনযাত্রায় এই ধরনের সমস্যাগুলি সাধারণই। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্রায়েড খাবার এই রোগগুলোর কারণ হতে পারে। কিন্তু কখনও যদি নাভির কাছ থেকে পেটের ব্যথা শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে এটি পেটের ডান দিকে নিচের দিকে চলে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ সাবধান হওয়া জরুরি। এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ হলেও হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী
শরীরের একটি ছোট অঙ্গ হল অ্যাপেন্ডিক্স, যা ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত। যদিও শরীরের জন্য এর কোনও গুরুত্ব নেই, তবে যদি এতে কোনও রকম সমস্যা দেখা দেয় তবে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। দীর্ঘকালীন অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে সুস্থসবল মানুষকেই। আর অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে গিয়ে বা সংক্রামিত হয়েই অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়।
আরও পড়ুন: (Eye health alert: ওজন, সুগার নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে চোখ খারাপ হচ্ছে না তো! বাড়ছে নতুন বিপদের আশঙ্কা)
কেন হয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস
- অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ, যেমন মল, জীবাণু, বা অন্যান্য পদার্থ যা অ্যাপেন্ডিক্সের মুখ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়, যার ফলে প্রদাহ এবং সংক্রমণ হয়।
- কখনও কখনও অন্ত্রের প্রদাহ, সংক্রমণ বা ক্যানসারও অ্যাপেন্ডিক্সকে প্রভাবিত করতে পারে।
- এছাড়াও, খাবারে ফাইবারের অভাব এবং জিনগত হিস্ট্রি থাকলেও অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের লক্ষণ
- পেটের নিচের ডান অংশে তীব্র ব্যথা। প্রথমে ব্যথা নাভির কাছে অনুভূত হয়, তারপর ধীরে ধীরে পেটের নিচের ডান দিকে চলে যায়।
- একদমই খিদে পায় না।
- ক্রমশ বমি, জ্বর, গ্যাস, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
- পেটে চাপ পড়লেই রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করেন।
- পেটে সামান্য ফোলাভাবও দেখা দিতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রতিরোধ করা যায় কীভাবে
অ্যাপেন্ডিসাইটিস সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা কঠিন। তবুও কিছু বিশেষ পদক্ষেপ এর ঝুঁকি কমাতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবে: ফাইবার সমৃদ্ধ, যেমন ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য ইত্যাদি খেতে থাকুন। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং অ্যাপেন্ডিক্সে ব্লকেজের ঝুঁকি হ্রাস করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে: নিয়মিত ব্যায়াম করলে অন্ত্রের গতিশীলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত জল খান: নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া জরুরি।
মনে রাখবেন, যদি এই সমস্যার সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে অবস্থা গুরুতর হতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে এবং সংক্রমণ পুরো পেটেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। যদিও গত কয়েক বছর ধরে, বয়স্ক ব্যক্তিদেরও অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা একটাই, তা হল সার্জারি। এটি সাধারণত অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। এটি অপসারণ করলে শরীরের উপর কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে না। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ডায়েট ভালো রাখাটা জরুরি।