স্কুলের আর্ট ওয়ার্কে সামান্য ভুল। তার জেরেই স্কুল থেকে ‘তাড়িয়ে’ দেওয়া হল ১৪ বছরের এক ছাত্রীকে। বাবা-মাকে না জানিয়েই স্কুলচত্ত্বর থেকে বার করে দেওয়া হয় তাঁকে। শুক্রবার দমদমের অক্সিলিয়াম কনভেন্ট স্কুলের (Auxilium Convent School Dumdum) বিরুদ্ধে এহেন অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের অভিযোগ উঠল। ফেসবুকে গোটা ঘটনাটি বিবৃত করে একটি পোস্ট করেছেন ছাত্রীর বাবা তমাল মুখোপাধ্যায়। তমালের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে কোনও কারণ ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাও যে-সে শাস্তি নয়, সরাসরি স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই রাস্তায় বার করে দেওয়া হয় পড়ুয়াকে।
মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ
তমালের কথায়, পাঁচদিন ধরে রাত একটা পর্যন্ত জেগে মেয়ে আর্ট ওয়ার্ক করেছিল। শেষের কিছু কাজ স্কুলে এক বন্ধুর সঙ্গে মিলিতভাবে করার কথা। কিন্তু সেই বন্ধুটি স্কুলে ঠিক সময়ে এসে না পৌঁছানোয় কাজটি শেষ হয়নি। এর পরেই ছাত্রীটিকে ক্লাসের মধ্যে চরম অপমান করেন শিক্ষিকা। তমালের অভিযোগ, তাঁর মেয়ের দোষ না থাকা সত্ত্বেও আর্ট ওয়ার্ক ছিঁড়ে ফেলেন ওই শিক্ষিকা। ছেঁড়া-নষ্ট জিনিসগুলি হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। মানসিকভাবে গোটা ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ছাত্রীটি। তমালের কথায়, টানা এক ঘন্টা ধরে সে কাঁদতে থাকে। স্কুলে যেতে রীতিমতো ভয় পেতে থাকে। গোটা ঘটনার জেরে বর্তমানে আতঙ্কিত ১৪ বছরের কিশোরী পড়ুয়া।
পোস্টের লিঙ্ক এখানে
আরও পড়ুন - উপরে উঠে যাবে ব্রিজ, নিচ দিয়ে যাবে জাহাজ! ভারতেই তৈরি হচ্ছে এই নয়া ‘বিস্ময়’
পড়ুয়ার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
রাগের বশে বিচিত্ররকমের শাস্তি দিয়ে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার মতো শাস্তি কোন ‘দায়িত্ববোধ’ থেকে দেওয়া হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। স্কুলচত্ত্বরের বাইরে সেই সময় কেউ ছিল না বলেই দাবি তমালের। তাঁর কন্যার কাছে কোনও ফোনও নেই। ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত ছিল ছাত্রীর মা। তা না হলে একাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্কুলগাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হত। পড়ুয়ার নিরাপত্তা নিয়ে এখানেই উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভরসায় সন্তানকে স্কুলে পাঠালে কি বড়সড় বিপদের শঙ্কাতেও ভুগতে হবে অভিভাবকদের? শুধুমাত্র বিচিত্র শাস্তি দিতে কোনও নিরাপত্তা ছাড়াই একজন পড়ুয়াকে এভাবে বার করে দেওয়া যায়? বিশেষত সে একজন মেয়ে পড়ুয়ার ক্ষেত্রে এটি কতটা সঙ্গত, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি পড়ুয়াটির কোনও বিপদ হলে তার দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ নিতেন কি না সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
পোস্টের লিঙ্ক এখানে
আরও পড়ুন - বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ২০২৪! ঘনিয়ে আসছে শেষ দিন? যা বলল C3S
স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা
ঘটনাটির পর তমালবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিধ্বস্ত থাকায় এই মুহূর্তে কথা বলতে চাননি তিনি। অন্যদিকে স্কুলের সঙ্গে HT বাংলার তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। পরে HT বাংলার তরফে বিকেলের দিকে এক প্রতিনিধি স্কুলে পৌঁছালে দেখা যায়, স্কুল বন্ধ।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
তমালের তাঁর পোস্টে জানান, এই ঘটনা ঘটার পর তিনি দমদম থানায় জেনারেল ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন। থানার তরফে এই ঘটনায় সহযোগিতা করা হলেও জিডি নেওয়া হয়নি। তমালের অভিযোগ, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে সেখানে অপেক্ষা করেন তিনি, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। এই প্রসঙ্গে জানার জন্য HT বাংলার তরফে ফোন করা হয়েছিল দমদম থানায়। টানা আধঘন্টা ধরে চেষ্টা করার পরেও ফোন ব্যস্ত ছিল। ফলে তারা কেন জিডি নিতে অস্বীকার করছিলেন, তা জানা যায়নি।
শিশুসুরক্ষা আইনে পদক্ষেপের পরামর্শ
পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর শিশুসুরক্ষা আইনে পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। কমিশন অব চাইল্ড রাইটস প্রোটেকশনের ধারায় মামলা করার পরামর্শও দেওয়া হয়। তবে ইতিমধ্যে তমাল আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।