মাঙ্কিপক্স ইতিমধ্যেই তার থাবা বিশ্বের একাধিক দেশেই বসিয়েছে। বাদ যায়নি ভারতও, মাঙ্কিপক্সের সপ্তম কেসটি ধরা পড়েছে কেরলে। ভারতে যে সাতটি মাঙ্কিপক্সের কেস ধরা পড়েছে তার মধ্যে পাঁচটিই হচ্ছে কেরলের, বাকি দুটো দিল্লির। ২২ জুলাই এক বাইশ বছর বয়সী যুবক, যিনি ইউএই থেকে সদ্য দেশে ফিরেছেন তাঁর দেহে এই রোগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এটি একটি ভাইরাল জুনোটিক রোগ (Zoonotic disease)। মাঙ্কিপক্স এবং স্মলপক্স দুটো রোগেরই লক্ষণ এক, তবে স্মলপক্সের তুলনায় মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো তুলনামূলক ভাবে হালকা।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি হল ডাবল স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ (DNA) ভাইরাস। এটি আদতে পক্সভিরিডি পরিবারের অর্থ অপক্স ভাইরাস বংশের অন্তর্গত। মাঙ্কিপক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড হচ্ছে ৬ থেকে ১৩ দিন, এর মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো ধরা পড়ে। আর সাধারণত রোগটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ অবধি থাকে।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো কী কী?
মাঙ্কিপক্স হলে জ্বরের সঙ্গে র্যাশ, মাথা ব্যাথা, গা ব্যথা, দুর্বলতা, ইত্যাদির মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। ম্যাকুলো-প্যাপুলার র্যাশগুলো স্মল পক্সের মতোই ধীরে ধীরে ভেসিকেলস এবং পুসটুলেসে পরিণত হয়। যদিও এই রোগটি নিজে থেকেই সেরে যায় তবুও যথাযথ সাবধানতা এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
আয়ুর্বেদ মতে মাঙ্কিপক্স আসলে কী?
দিল্লির এআইআইএ (AIIA)-এর প্রফেসর ডক্টর আনন্দ মুরের মতে, এই রোগের যা যা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তাতে মাঙ্কিপক্সকে মাসুরিকা রোগের সঙ্গে এক শ্রেণিতে ফেলা যায়। আয়ুর্বেদ অনুসারে এই মাসুরিকা রোগটি হচ্ছে পিত্ত-রক্ত দুষ্টি জনিত রোগ। ডক্টর মুরের মতে, এই মাসুরিকা রোগটিকে উপসর্গের ভিত্তিতে দোষাজা শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে যেখানে এটি নানা ধরনের পক্স, হাম, চিকেনপক্স, স্মলপক্স এবং এই মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে এক করা যেতে পারে। সকলেই এটা জানেন যে মাঙ্কিপক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ, এবং কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে এই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঔপসর্গিকা রোগের সঙ্গে এই রোগগুলোকে বোঝা যেতে পারে।
জেনে নিন ডক্টর মুরের মতে মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য কী কী করা উচিত
মাঙ্কিপক্স হলে প্রথমে অবশ্যই রোগীকে উপোস করাতে হবে। অর্থাৎ, রোগীকে হয় স্বল্প খাবার খেতে হবে, অথবা কোনও খাবার না খেয়ে অভুক্ত থাকতে হবে।
ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে যে মাসুরিকা রোগটি হচ্ছে পিত্ত রক্ত জনিত তাই এর জন্য হালকা রেচন চিকিৎসা করতে হবে। এই চিকিৎসাটি পঞ্চকর্ম থেরাপির অঙ্গ। এই চিকিৎসায় রোগীকে ত্রিব্রত, অরাগবধ, ত্রিফলার মতো ওষুধ দেওয়া উচিত। তেল ঝাল ছাড়া, হালকা খাবার খেলে পেট ভাল থাকবে, পরিষ্কার হবে যা এই রোগের জন্য জরুরি।
মাঙ্কিপক্স রোগটি নতুন হলেও এই ধরনের লক্ষণযুক্ত রোগের উদাহরণ এবং চিকিৎসা দুইই যেহেতু আয়ুর্বেদে আছে সেহেতু সেই লক্ষণগত ভাবে মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা সম্ভব আয়ুর্বেদ দ্বারা। মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য মহা সুদর্শন ঘনা জরিবুটি, লক্ষ্মীবিলাস রাশ, সামশামানি বটি, ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। রক্ত পিত্তর জন্য পঞ্চনিম্বদি চূর্ণ, হরিদ্র খণ্ড, বৃহৎ মঞ্জিস্থদি কোয়াথও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া সারা গায়ে যে র্যাশ দেখা যায় সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য নিমপাতা কিংবা ত্রিফলার কোয়াথ ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যদিকে ইমিউনিটির জন্য চবনপ্রাস, ব্রহ্ম রসায়ন, অশ্বগন্ধাদি লেহ্য, ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা অনুযায়ী মাঙ্কিপক্স হলে কী কী খাবেন
জল খেলেই রোগীকে ঈষদুষ্ণ/হালকা গরম জল খেতে হবে।
ব্রাউন রাইস, মুগ ডাল, খিচুড়ি, মুসুর ডাল, ছোলার ডাল, আঙুর, বেদানা, ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী প্রত্যেকদিন যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম করা উচিত মাঙ্কিপক্স হলে।
মাঙ্কিপক্স হলে কী কী খাবেন না
তেলে ভাজা, জাঙ্ক ফুড এই সময় এড়িয়ে চলাই ভাল। এছাড়া শাক, বেশি মাত্রায় নুন, টক জাতীয় খাবার, ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি খাবার খাওয়ার সময়ে অনিয়ম করা উচিত নয়।