বাংলাদেশের জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশের জন্য যে কারণগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল ছয় দফা দাবি। ৭ জুন সেই দাবি দিবস দিসাবে পালিত হয় বাংলাদেশে।
১৯৬৬ সালে এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারা দিয়ে অসংখ্য বাঙালি তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা করে।
১৯৬৬ সালের ফেব্রয়ারি মাসের শুরুতে তদানিন্তন পাকিস্তান সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দাবিগুলির উদ্দশ্য ছিল বাঙালি জাতির উদ্দশ্যে সায়ত্বশাসন আদায় করা।যা পরবর্তিকালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজ বপন করে।
ছয় দফা দাবিগুলি ছিল
১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তন করে, অঙ্গরাজ্যগুলির আইনসভা তৈরি করা। এই আইনসভা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটের ভিত্তিতে হবে এবং এটি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি হবে।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের ত্ক্ষমতা কেবলমাত্র বৈদেশিক নীতি ও দেশরক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে।
৩. অঙ্গরাজ্যগুলির কর ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা থাকবে
৪. কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে ২টি পৃথক মুদ্রা থাকবে। মুদ্রা ২টি সম্পূর্ণ বিনিময়যোগ্য হবে।
৫. বৈদেশিক বানিজ্যে অঙ্গরাজ্যগুলিকে ত্ক্ষমতা দিতে হবে
৬.আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের স্বাধীনতা দিতে হবে।
দাবিগুলি তদানিন্তন পাকিস্তান সরকার না মানায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়।
এই দাবিগুলিকে অনেক ঐতিহাসিক বাংলাদেশের ‘মুক্তির সনদ’ হিসাবে মনে করেন।
দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, ৬ দফা দাবি কেবল বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ নয়, সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬ দফার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন এবং বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার ৬ দফার রূপকার বঙ্গবন্ধুকে ৮ মে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। কিন্তু ৬ দফা বাঙালির প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়। আর ৬ দফার প্রতি বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থনে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা।
বিগত ২ বছর কোভিড মহামারির জন্য এই দিবস পালন করা সম্ভব হয়নি। এই বছর আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই দিনটি দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাংলাদেশ স্থানীয় সময় অনুযায়ী সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং আওয়ামি লিগের পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য, এবং বিকাল চারটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আলোচনা সভা।