গাঁজা বা ভাঙের নাম শুনলেই প্রথমেই মাথায় আসে, নিষিদ্ধ মাদক বিশেষ বা তার পাচার কারবার নিয়ে খবরে উঠে আসা নানান ঘটনার কথা। অনেকেই গাঁজার নাম শুনেই ভুরু কুঁচকিয়ে ফেলেন! এটি দীর্ঘদিন সেবনে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে। যার প্রভাব শরীরে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে ক্ষতিকারক দিক ছাড়াও ভাঙ বা গাঁজার কয়েকটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। সামনেই রয়েছে দোল উৎসব, আর তার সঙ্গেই রয়েছে হোলি। আর হোলির দিন ভাঙ চেখে দেখার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। তবে জানেন কি, ভাঙ বা গাঁজার কিছু ইতিবাচক কার্যকরী দিকও রয়েছে? এই বিষয়ে আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতামত একনজরে।
ভাঙের উল্লেখ রয়েছে বেদে। এই উদ্ভিত মূলত হিমালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায়। তবে এর মেডিসিন সংক্রান্ত গুরুত্ব অপরিসীম বলছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্নায়ুর সমস্যা, বাতের ব্যথা, অনিদ্রা, পাইলসকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে ভাঙ বা গাঁজা পাতার গুরুত্ব রয়েছে।
IBS সমস্যা দূর করতে
ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম কাটাতে সুবিধা দিতে পারে গাঁজা পাতার ব্যবহার। এটি সেবনে ক্ষিদে বেড়ে যায় বলে জানাচ্ছেন বহু আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ। এতি সেবনে অন্ত্রের শোষণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়াও আমাশয় দূর করতেও কাজে দেয় এই পাতা। শরীর থেকে মল বেরিয়ে গিয়ে শরীরকে দুর্বল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এর ' গৃহী' ক্ষমতা।
মাথা যন্ত্রণা
বহু সময় মাথা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে ভাঙ। মাইগ্রেন ও সায়াটিকের মতো সমস্যা থেকে রক্ষা করে ভাঙ। এছাড়াও ঋতু পরিবর্তনগত বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই গাঁজা পাতা।
অনিদ্রা কাটাতে
অনেকেই টেনশনে ভুগে রাতে ঘুমোতে পারেন না। তাঁদের জন্য এই গাঁজা পাতা বা ভাঙের বিধিবদ্ধ সেবন উপকারী হতে পারে। অনিদ্রা কাটাতে সাহায্য করে ভাঙ পাতা।
পাইলস দূর করতে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পাইলস খুবই জটিল রোগ। পাইলস সারাতে ভাঙ পাতার পেস্ট তৈরি করে তা নির্দিষ্ট জায়গায় লাগালে আরাম মেলে বলে দাবি আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের। পাইলস সারাতে গাঁজা পাতার সেবনও কার্যকরী ফল দেয় বলে মনে করা হয়।
হুপিং কাশি
'ব্রঙ্কোস্প্যাজম রিলিভার' হিসাবে গাঁজা পাতা বা ভাঙের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এই পাতার সেবনে হুপিং কাশির মতো সমস্যা কেটে যায়।
আথ্রাইটিস
ভাঙের পাতার তেল বা পাতা আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কাটিয়ে দেয়। রিউমাটয়েড আর্থরাইটিসে খুবই কার্যকরী এই পাতা। এই বাতের ব্যথার ক্ষেত্রে শরীরে জয়েন্টে যে 'জ্বালা'ভাব দেখা যায়, তা সহজেই কেটে যায় ভাঙ পাতার ব্যবহারে।
সুফল পেতে কীভাবে ব্যবহার করা যাবে এই পাতা?
ভাঙ উদ্ভিদের ফুল, পাতা, বীজ, কাণ্ড, সমস্তটাই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত, পাতা বেঁটে পাওয়া যায় ভাঙ, আর ফুলকে পিষে মেলে গাঁজা, হাশিস, চরশ। এতে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল খুবই বেশি পরিমাণে থাকে। এর থেকেই একটি অন্য মানবিক স্তর তৈরি হতে পারে। কারণ এতে থাকে সাইকোঅ্যাকটিভ এজেন্ট। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা বলছেন, গাঁজা, হাশিশ, বা চরশ সেবনের পক্ষে তাঁরা এরেবারেই নন। তাঁরা বলছেন, দুধের মধ্যে গাঁজা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিলে তার সাইকো অ্যাকটিভ এজেন্ট কমে যায়। এটিকে মেডিসিনের দিক থেকে কার্যকরী করে সুফল পেতে ঘি বা দুধে শুদ্ধ করে ব্যবহার করলে বহু সমস্যার সমাধান হয়।