পরনে লালডুরে শাড়ি। কপালে সিঁদুরের টিপ, মাথায় ঘোমটা। গলায় আবার একগাছা হার, হাতে চুরি। মা জগদ্ধাত্রীকে (Jagaddhatri Puja 2024) বরণ করে নিচ্ছেন কিছু পুরুষ — ঠিক এই সাজেই। আর পাঁচটা পুজোর মতোই নিয়ম মেনে চলছে মায়ের বরণ। কিন্তু কোনও মহিলার উপস্থিতিতে নয়। বরং মহিলাবেশী পুরুষের উপস্থিতিতে। আর এই দৃশ্য দেখা যায় হুগলির ভদ্রেশ্বরে। প্রতি বছর দশমীর দিন সেখানে মায়ের বরণে উপস্থিত থাকেন পুরুষরা। কিন্তু এঁয়ো স্ত্রীর বেশে তাদের দেখা যায় সেখানে। ভদ্রেশ্বরের বিখ্যাত পুজো তেঁতুলতলার পুজো। সেখানেই প্রতি বছর দেখা যায় এই দৃশ্য।
পুরুষরাই বরণের দায়িত্বে
গত ২৩২ বছর ধরে এই রীতিতেই মায়ের বরণ করা হচ্ছে। ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা জগদ্ধাত্রী বারোয়ারি পুজোয় মোট ১৭ জন পুরুষ থাকেন। তারাই প্রতিমা নিরঞ্জন, মাকে সিঁদুর পরানো থেকে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন — বিবাহিত নারীর বেশে। আবার বরণের রীতিনীতি শেষ হয়ে গেলে নিজেদের মধ্যে সেলফি তোলা থেকে আনন্দ করার রীতি তো রয়েছেই। কিন্তু কেন এই রীতি পালন করা হয় তেঁতুলতলা জগদ্ধাত্রী বারোয়ারির পুজোয়? এর নেপথ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের একটি কাহিনি।
আরও পড়ুন - সরকারি স্কুলগুলির কেমন হাল সারা দেশজুড়ে? কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা
ইংরেজ আমলের কাহিনি
জনশ্রুতি, ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি এলাকায় একদা ফরাসি ও ইংরেজদের সেনা ছাউনি ছিল। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে মহিলাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দেওয়া হত না। কিন্তু মহিলারা অন্দরমহলে থাকলে পুজোর দায়িত্ব সামলাবে কে? এই সমস্যার সমাধান করতেই এগিয়ে এলেন এলাকার পুরুষরা। মহিলাদের মতো শাড়ি, সিঁদুর পরে, সাজগোজ করে তাঁরা মাকে বরণ করা থেকে নিরঞ্জনের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। আজ ২০০ বছর পরেও সেই রীতি সমানভাবে পালন করা হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন - অল্প বয়সেই টাক পড়ছে? এক গাদা চুল হবে মাথায়, ৫ টিপস জানলেই যথেষ্ট
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে
প্রসঙ্গত, এই পুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর দেওয়ান দাতারাম সুর থাকতেন ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটিতে। তিনিই রাজার অনুমতি নিয়ে দুই কন্যাকে নিয়ে বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। কিন্তু পরে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের পুজোর দায়িত্ব তখন পাড়ার লোকেরা নিয়ে নেন। বারোয়ারি পুজোর রূপ পায় ভদ্রেশ্বেরের তেঁতুলতলার পুজো। সেই থেকেই আজও একইভাবে চলছে পুজো।