সারাক্ষণ নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে থাকতেন মহিলা। দিনের বেলায়ও তাঁর খুব ঘুম পেত। এমনকি কাজ করতে করতেও ঘুমিয়ে পড়তেন। ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না। তাঁর শ্বাসেও মদের গন্ধ পাওয়া যেত। তিনি কখনও ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তাররা দেখতেন, মহিলারা রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে রয়েছে। তাই ডাক্তারদের মনে হত, মদ্যপানের কারণেই তিনি নেশাগ্রস্ত। কিন্তু তা সত্যি। সত্যিই মদ্য পান করতেন না মহিলা। তিনি ডাক্তারদের একই কথা বলতেন যে তিনি মদ্যপান ছাড়াই নেশাগ্রস্ত থাকেন।
ব্যাপারটা কানাডার। বহু বছর ধরে এই সমস্যার সঙ্গে মহিলার ব্যাপক লড়াইয়ের পরে, এখন এর আসল কারণ প্রকাশ্যে।সোমবার কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি কেস রিপোর্ট অনুসারে, টরন্টো এবং মাউন্ট সিনাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা দেখেছেন যে ৫০ বছর বয়সী ওই মহিলা অটো-ব্রুরি সিনড্রোমে ভুগছিলেন। গত পাঁচ বছর, তাঁর ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) ছিল, যার জন্য প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং নাইট্রোফুরান্টোইনের ঘন ঘন কোর্সের পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লাক্স ডিজিজ, ডেক্সলানসোপ্রাজল দিয়ে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
যদিও মহিলা এর আগে ছুটির দিনে এক গ্লাস করে ওয়াইন পান করতেন ঠিকই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ধর্মীয় কারণের জন্য তিনি এই নেশা দিয়েছিলেন। অটো-ব্রুরি সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আগে, মহিলাকে তার নেশার মতো অবস্থার কারণেই গত দুই বছরে কমপক্ষে সাত বার জরুরি বিভাগে দেখাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডাক্তাররা তাঁর সমস্যাকে অ্যালকোহলের নেশা বলে মনে করেছিলেন।
- অটো-ব্রুরি সিন্ড্রোম কী
অটো-ব্রুয়ারি সিনড্রোম বা অন্ত্রের ফার্মেন্টেশন সিন্ড্রোম হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে রোগীর পাচনতন্ত্র, মুখ বা মূত্রতন্ত্রের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ইথানল তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, অন্ত্রের ডিসমোটিলিটি ডিজঅর্ডার এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের মতো কমরবিডিটিগুলি অটো-ব্রুয়ারি সিন্ড্রোমের সঙ্গে যুক্ত।
- শেষমেষ কীভাবে চিকিৎসা করা হয়েছিল ওই মহিলার
মহিলাটিকে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ এবং কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েট দেওয়া হয়েছিল। এক মাস ওষুধ এবং কম কার্বোহাইড্রেট ডায়েট শেষ করার পরে, এই লক্ষণগুলি চার মাস ধরে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু যখন আবার মহিলা কার্বোহাইড্রেট খরচ বাড়িয়েছিলেন, ওই লক্ষণগুলি আবারও ফিরে এসেছিল। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট খেলেই এই বিরল সিনড্রোম মাত্রা পাবে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. রাহেল জিউড সিএনএনকে বলেন যে মহিলাদের অ্যালকোহলের মাত্রা প্রতি লিটারে ৩০ মিলিমোল এবং ৬২ মিলিমোলের মধ্যে হতে পারে - লিটার প্রতি দুই মিলিমোলের নীচে স্বাভাবিক। আবার বারবারা কর্ডেল, অটো-ব্রুয়ারি সিন্ড্রোম ইনফরমেশন অ্যান্ড রিসার্চ নামে একটি অ্যাডভোকেসি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সিএনএনকে জানিয়েছেন যে প্রতি লিটারে ৬২ মিলিমোল পর্যন্ত অ্যালকোহলের মাত্রা ব্যতিক্রমীভাবে বেশি এবং এটি জীবন-হুমকি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।