আমেরিকান মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস লি'র হঠাৎ মৃত্যুর কথা প্রায় সবার জানা। ‘এন্টার দ্য ড্রাগন’ সিনেমা তাঁকে জগৎজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিল। একইসঙ্গে মার্শাল আর্টকে বিখ্যাত করে তুলেছিল সারা বিশ্বে। শরীরের দিক থেকে তাঁর মতো ফিট বডি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খাওয়াদাওয়াও আর পাঁচজনের মতো ছিল না। বরং বাঁধাধরা ডায়েটেই তিনি থাকতেন বরাবর। তারপরেও অকালে প্রাণ হারাতে হয় এই বিশ্ববিখ্যাত মার্শাল আর্টিস্টকে। মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন মস্তিষ্ক হঠাৎ ফুলে যাওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতার। হঠাৎ মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তৎক্ষণাৎ সে উত্তর না মেলেনি। চিকিৎসকদের অনুমান ছিল ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার জন্য এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ অনুমান ছাড়া আরও বেশকিছু গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর ফ্যানদের মধ্যে। অনেকে মনে করতেন শত্রুপক্ষের চক্রান্তে প্রাণ গিয়েছে অভিনেতার, কারও ধারণা ছিল কারও অভিশাপের জন্যই তাঁকে অকালে চলে যেতে হল। পাশাপাশি কেউ কেউ মনে করতেন, হিংসুটে প্রেমিকা বিষ খাইয়ে তাঁকে হত্যা করেছে। যদিও এসবের কোনওটাই আসলে হয়নি। বর্তমানে একটি গবেষণা তেমনটাই দাবি করছে।
ক্লিনিকাল কিডনি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটির দাবি, অতিরিক্ত জল খাওয়ার কারণে অকালে হারিয়ে যেতে হল অভিনেতাকে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ব্রুস লির রোগটির নাম হাইপোন্যাট্রিমিয়া। এই রোগে অতিরিক্ত জল খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়ামের ঘনত্ব কমে যায়। এই ঘটনাই ডেকে আনে মৃত্যু।
সাধারণ অবস্থায় বেশি জল আমরা অনেকেই খেয়ে ফেলি। অতিরিক্ত জল খেলে কিডনি তা পরিশ্রুত করে শরীর থেকে বের করে দেয়। গবেষকদের মতে, ব্রুস লির কিডনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল না। যে কারণে অতিরিক্ত জল শরীর থেকে বেরোনোর সুযোগ পায়নি। ওয়াটার হোমিওস্ট্যাসিস ঠিকভাবে না হওয়ার ফলে শরীরে জল জমতে শুরু করে। অর্থাৎ হাইপোন্যাট্রিমিয়া দেখা দিতে থাকে। এই রোগের ফলে জল সোজা মস্তিষ্কে গিয়ে জমতে থাকে। ফলত, মস্তিষ্ক ফুলে গিয়ে সেরিব্রাল ওডিমা হয়। এই রোগেই মৃত্যু হয় অভিনেতার।
ব্রুস লির ডায়েটে যথেষ্ট পরিমাণে জল থাকত। নানারকম ফলের রস রোজ খেতেন অভিনেতা। জলের প্রতি তাঁর একরকম ভালোলাগাও ছিল। ব্রুস লি'র বিখ্যাত উক্তি, ‘জলের মতো হও,বন্ধু’ অনেকেরই হয়তো মনে আছে। ভাগ্য এমনই অদ্ভুত যে জলের কারণেই তাঁকে অকালে চলে যেতে হল।