শার্লট গিলমোর, নিউজিল্যান্ডবাসী এক তরুণী, ডিপ্রেশনের ওষুধ নিতেন নিয়মিত।কিন্তু তিনি যে এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার হবেন তা কে জানতো? মনের অসুখ সারাতে গিয়ে শরীরের এতবড় ক্ষতি হয়ে যাবে তা হয়তো একেবারেই আঁচ করতে পারেন নি তিনি। ঠিক কী হয়েছে তাঁর? বছর ২৩ এর এই তরুণী দাবি করেন, ডিপ্রেশনের ওষুধ থেকেই শরীর ভেতর থেকে পুড়ে গাছে তার। স্থানীয় সংবাদ আউটলেট স্টাফ রিপোর্ট করেছে যে, স্টিভেন-জনসন সিন্ড্রোমে (এসজেএস) আক্রান্ত হয়েছেন মিসেস গিলমোর। এটি একটি অত্যন্ত বিরল রোগ যা ত্বক, মুখ এবং অন্ননালীতে (oesophagus)বেদনাদায়ক ফোস্কা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: (ক্যানসারকে কেন ক্যানসার বলা হয়? খোঁজ মিলল মারণ রোগের আসল উৎসের)
নিউ ইয়র্ক পোস্ট দ্বারা উদ্ধৃত মায়ো ক্লিনিক অনুসারে, SJS সাধারণত ফ্লু-এর মতো লক্ষণগুলির সাথে শুরু হয় এবং তারপরে ফোস্কা ফুসকুড়ি হয় এবং ১০% ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। চিকিত্সকরা মনে করেন যে মিসেস গিলমোরের শরীরে ওষুধের এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ল্যামোট্রিজিন থেকে তৈরি হয়। ল্যামোট্রিজিন হলো একটি অ্যান্টিপিলেপটিক ড্রাগ যা হতাশার (Depression) জন্যও ব্যবহৃত হয়, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রায় নেই বললেই চলে। যদি তা দেখাও যায় তাহলে সেটি স্টিভেন-জনসন সিন্ড্রোম (SJS) হিসাবে পরিচিত।কয়েক সপ্তাহ ধরে বুকে সংক্রমণে ভুগছিলেন তিনি।
এরপর হঠাত্ই একদিন একটি বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি তার কষ্ট কে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে SJS থেকেই বুকে সংক্রমণের সূত্রপাত কিনা তা স্পষ্ট নয়।হাসপাতলের সদস্যদের তিনি জানান, ‘আমি আয়নায় নিজের দিকে তাকালাম, এবং শুধু কান্নায় ফেটে পড়লাম। অবচেতনভাবে মনে হতো যে এটি বেশ গুরুতর কিছু হয়েছে’। সত্তর তিনি হাসপাতালে ছুটে যান যেখানে কিছু ফিলিপিনো নার্সরা তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারলেও কিন্তু চিকিৎসাকর্মীরা এই বিষয়ে অনিশ্চিত ছিলেন। কেউ এই রোগটির বিষয়ে খুব বেশীকিছু না জানায় ত্রস্ত হয়ে পড়েন মিসেস গিলমোর।
‘সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি হল এটি আমাকে ভিতর থেকে পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই শরীরের বাইরেও সমস্ত অংশই প্রায় পোড়া ছিল কারণ আমার ভিতরের অংশ এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে এটি আমার ত্বকের বাইরের দিকে প্রকাশ পেতে শুরু করে।’
এখানেই শেষ নয়, ত্বক এবং মুখ ছাড়াও, এটি তার পাচনতন্ত্র জুড়ে বেদনাদায়ক ফোস্কা সৃষ্টি করে। যার ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তার পক্ষে খাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই ডাক্তাররা তাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য একটি ফিডিং টিউব প্রবেশ করান।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, স্টেরয়েড চিকিত্সার পরেও, তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরপর সেই স্টেরয়েড ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি তার দৃষ্টিশক্তিও হারান।
তবে ২৩ বছর বয়সী যুবতী জানান যে শেষ পর্যন্ত তাকে আবার স্টেরয়েড ট্রিটমেন্ট শুরু করা হলে তিনি সেরে ওঠেন অনেকটাই। চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, এক মাস হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তার শরীরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু অংশ এখনও যন্ত্রনা দেয়, যা ধীরে ধীরে সেরে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।